বিকেন্দ্রীকরণ কি‌? বিকেন্দ্রীকরণ এর সুবিধা অসুবিধা

বিকেন্দ্রীকরণ হলো যে কোন ব্যবস্থাপনার একটি গতিশীল এবং সম্প্রসারিত প্রক্রিয়া। বৃহদায়তন ও বহুজাতিক কোম্পানি দক্ষতার সাথে পরিচালনা করার জন্য বিকেন্দ্রীকরণের তুলনা নেই। তাছাড়া সকল ধরনের বৃহদায়ন কোম্পানি তাদের সকল কার্যক্রম বন্টনের জন্য এবং সফল ভাবে বাস্তবায়নের জন্য বিকেন্দ্রীকরণ এর উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিকেন্দ্রীকরণের অসুবিধার চেয়ে সুবিধার পরিমাণ অনেক বেশি। 

বর্তমানে বিকেন্দ্রীকরণের ধারণা গুলো ব্যবসা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আইন ও জনপ্রশাসন, প্রযুক্তি এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। আজকের পোস্টে আমরা বিকেন্দ্রীকরণ কি‌ পানি বিস্তারিত আলোচনা করব। এছাড়াও বিকেন্দ্রীকরণ এর সুবিধা অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। বিকেন্দ্রীকরণ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়ার জন্য সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।

বিকেন্দ্রীকরণ কাকে বলে

বিকেন্দ্রীকরণ কি‌, বিকেন্দ্রীকরণ এর সুবিধা অসুবিধা,

বিকেন্দ্রীকরণ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে স্থানীয় বা কেন্দ্রীয় সরকার, আঞ্চলিক বা স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনিক ক্ষমতা ভাগাভাগি করে বন্টন করে থাকে। কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে যে বিকেন্দ্রীকরণ ঘটনা ঘটে তাকে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ বলা হয়। বিকেন্দ্রীকরণ এর মাধ্যমে একটি দেশের কোন অঞ্চল তার প্রয়োজন অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করতে পারে এবং আইন পাল্টাতে পারে। যেহেতু তারা নিজেরাই আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাখে তাই এসব অঞ্চলে স্বায়ত্তশাসন বেশি দেখা যায়। খুব সহজভাবে বলতে গেলে, ক্ষমতাকে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ছড়িয়ে দেওয়ার কৌশলকেই বিকেন্দ্রীকরণ বলা হয়ে থাকে। বিকেন্দীকরণের বিভিন্ন ধরনের প্রকারভেদ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: 

  • আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণ, 
  • আইনি বিকেন্দ্রীকরণ, 
  • প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ।

নিচে এই তিনটি বিকেন্দ্রীকরণ ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

১. আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণ 

যখন কেন্দ্রীয় সরকার অন্যান্য স্থানীয় সরকারের কাছে রাজস্ব সংগ্রহ এবং ব্যয়ের ক্ষমতা অর্পণ করে তখন তাকে আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণ বলা হয়ে থাকে। আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণ ব্যবস্থা চালু থাকলে স্থানীয় সরকার স্থানীয় সম্পদ থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করবে এবং স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন সেবা দানের জন্য সেসব রাজস্ব থেকে খরচ করবে।

২. আইনি বিকেন্দ্রীকরণ

আইনি বিকেন্দীকরণে কেন্দ্রীয় সরকার স্থানীয় সরকার বা অন্যান্য সংস্থাগুলোকে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করবে এবং স্থানীয় সরকারকে স্থানীয় ঝামেলা গুলো সমাধান করার জন্য স্বায়ত্তশাসিতভাবে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করবে।

৩. প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ

স্থানীয় সরকার যখন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করে তখন তাকে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ বলা হয়ে থাকে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা পরিবেশের বিভিন্ন বিষয় যখন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে সামলানোর জন্য স্থানীয় সরকার গ্রহণ করে তখন তা প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ এর আওতায় পড়ে।

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ বলতে কি বোঝো

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ বলতে বোঝায় যখন একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা সরকারের ক্ষমতা বিভিন্ন স্তরে বা অংশগুলোতে বন্টন করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। অর্থাৎ যখন ক্ষমতা একই স্থানে আটকে না থেকে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে তখন তাকে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ বলা হয়ে থাকে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণকে দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা: 

  • রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ, 
  • প্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরণ।

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের কারণসমূহ হলো: 

  • স্থানীয় সমস্যার স্থানীয়ভাবে সমাধান, 
  • কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ কমানো, 
  • গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় ভাবে প্রতিষ্ঠা করা,
  • স্থানীয় পর্যায়ের দক্ষতা বৃদ্ধি করা।

রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ কি

রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ হলো একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে স্থানীয় সরকারের কাছে বন্টন করা হয়। সহজ কথায় বলতে গেলে, সরকারের সকল ক্ষমতা যখন এক স্তর থেকে বিভিন্ন স্তরে বন্টন করা হয় তখন তাকে রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ বলে। রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো: 

  • গণতন্ত্রের প্রচার ও প্রসার নিশ্চিত করা, 
  • উন্নয়নের সুযোগসমূহ কাজে লাগানো, 
  • ক্ষমতা সঠিক বন্টন,
  • স্থানীয়ভাবে দক্ষতা বৃদ্ধি করা।

রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের বিভিন্ন ধরনের সুবিধা থাকলেও এর কিছু অসুবিধা রয়েছে। রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণে স্থানীয়ভাবে সমস্যার সমাধান করা গেলেও ক্ষমতার অপব্যবহার হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থেকে যায়। সমাজের নিম্ন স্তরে বিভিন্ন ধরনের অসামঞ্জস্যতা তৈরি হতে পারে। স্থানীয় সরকারের মধ্যে যেকোনো সময় অসমতা দেখা দিতে পারে যা সামগ্রিক অর্থে দেশের জন্য ক্ষতিকর।

শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ কি

কোন নির্দিষ্ট এলাকা বা শহরে কেন্দ্রীভূত শিল্পকে যখন বিভিন্ন ছোট ছোট এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হয় তখন তাকে শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ বলা হয়ে থাকে। শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণের নানা ধরনের সুবিধার মধ্যে অন্যতম হলো বড় শহরগুলোতে জনসংখ্যা এবং শিল্পের চাপ ধীরে ধীরে কমে যায়। শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো: 

  • বড় শহরগুলোতে শ্রমিক সংকট থাকায় শ্রমিক আন্দোলনের সম্ভাবনা থাকে, 
  • বড় শহরগুলোতে শিল্পের কারণে অধিক মাত্রায় দূষণ বৃদ্ধি পায়, 
  • বড় শহরগুলোতে জমির দাম বৃদ্ধির শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণের অন্যতম কারণ, 
  • পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি শিল্পের বিকেন্দীকরণের অন্যতম কারণ।

গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ কাকে বলে

গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ হলো একটু রাজনৈতিক ধারণা যেখানে ক্ষমতা কে কেন্দ্র করে স্থানীয় স্তরে স্থানান্তরিত করা হয়ে থাকে। একটি দেশের সরকার তার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা স্থানীয় সরকার বা জনগণের হাতে তুলে দেয়। গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো: জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং নিশ্চিত করা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, দক্ষতা বৃদ্ধি করা, বৈষম্য কমিয়ে আনা। এছাড়া জনগণের ক্ষমতার নিশ্চিত করা, কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব কমিয়ে আনা, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা, স্থানীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করা গণতান্ত্রিক বিকেন্দীকরণ এর উদ্দেশ্য।

আরো পড়ুন: কেন্দ্রীকরণ কি? কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ পার্থক্য

বিকেন্দ্রীকরণ এর সুবিধা

বিকেন্দ্রীকরণ কি‌, বিকেন্দ্রীকরণ এর সুবিধা অসুবিধা,

বিকেন্দ্রীকরণের অসুবিধাগুলোর চেয়ে সুবিধার পরিমাণ বেশি। চলুন এক নজরে বিকেন্দ্রীকরণের সুবিধা গুলো দেখে নেওয়া যাক: 

১) আমলাদের ক্ষমতা কমে যাওয়া 

যেকোনো স্থানে আমলাদের একচেটিয়া প্রভাব থাকে। এই প্রভাব কমিয়ে আনার জন্য ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ একান্ত জরুরী। এছাড়া প্রশাসনকে জনগণের হাতের নাগালে নিয়ে আসার জন্য বিকেন্দ্রীকরণের ভূমিকা রয়েছে। প্রশাসন যখন জনগণের সাথে মিলেমিশে যেতে পারে তখন আমলাদের দৌরাত্ম এমনিতেই কমে আসে।

২) কাজের চাপ কমে আসা 

যে কোন দেশের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের উপর অতিরিক্ত চাপ থাকে সকল সমস্যার সমাধান করার জন্য। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় প্রশাসন যখন অতিরিক্ত কাজের চাপ কমানোর জন্য কিছুটা দায়িত্ব আঞ্চলিক প্রশাসনের উপর অর্পণ করে তখন তাদের যেমন কাজের চাপ কমে ঠিক তেমনি দেশের সামগ্রিক সুষম উন্নয়ন সাধিত হয়। আঞ্চলিক ক্ষেত্রে যেসব সমস্যার সংঘটিত হয় সেসব সমস্যার সমাধান আঞ্চলিক সরকার বেশ ভালোভাবেই করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকারের তুলনায়।

৩) সুদক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থা তৈরি 

কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে সব কাজ করে ওঠা সম্ভব হয় না। আবার সুদক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থা তৈরি করা কেন্দ্রীয় সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে যখন কোন কাজ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ভাগ করে দেওয়া হয় তখন সুদক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব হয়। প্রশাসন যখন সুষ্ঠুভাবে এবং এককভাবে কাজ করতে পারে তখন তারা জনগণের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। এক কথায় প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সুদক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি আঞ্চলিক সরকারের যথেষ্ট অবদান রয়েছে।

৪) গণতন্ত্রের প্রসার নিশ্চিত করা 

গণতন্ত্রের প্রচার ও প্রসার তখনই নিশ্চিত হয় যখন বিকেন্দ্রীকরণ ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। যখন কোন ব্যবস্থাপনায় বিকেন্দ্রীকরণ হয়ে থাকে তখন সেই প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাধ্যমে সকল ধরনের কাজ সম্পাদন করা হয়ে থাকে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, সকল স্তরের কর্মকর্তা এবং কর্মচারী তাদের নিজস্ব মতামত প্রকাশের সুযোগ পায় এবং সকল ধরনের কাজে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। যা ব্যবস্থাপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৫) সহযোগিতা স্থাপন করা 

প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণে সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এতে করে কেন্দ্রীয় সংস্থা এবং আঞ্চলিক সংস্থার মধ্যে একটা যোগসূত্র তৈরি হয় যার ফলে সম্পর্ক আরো মজবুত হয়। যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকার তাদের সকল কাজ আঞ্চলিক পর্যায়ে ভাগ করে দিয়ে থাকে তাই এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট হতে আঞ্চলিক পর্যায়ে এবং আঞ্চলিক সরকারের নিকট হতে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রতিনিয়ত সকল ধরনের তথ্য এবং উপাত্ত স্থানান্তরিত হতে থাকে, যা সম্পর্কের উন্নতি ঘটায়।

৬) লাল ফিতার দৌরাত্ম নিরসন করা 

বিকেন্দ্রীকরণের ফলে সর্বদা কর্ম বিভাজন সৃষ্টি হয়। যেহেতু কাজ বিভিন্ন স্তরে ভাগ করা থাকে তাই সকল ধরনের কাজগুলো বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে করা হয় বলে অল্প সময়ের মধ্যে সকল ধরনের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। যখন একজন কর্মকর্তা টেবিলে কাজের ফাইল স্তুপ আকারে থাকে তখন তিনি মানসিক চাপে ভুগতে থাকেন। তাই প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে প্রশাসনিক কাজের ক্ষেত্রে লাল ফিতার দৌরাত্ম নিরসন করা সম্ভব।

৭) কর্মচারীদের মনোবল বৃদ্ধি 

প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে সকল স্তরের কাজ উচ্চ স্তর থেকে নিম্ন স্তরের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। যেহেতু উচ্চ স্তরের কর্মচারী এবং নিম্নস্তরের কর্মচারী এখানে একই পর্যায়ে কাজ করে থাকে সেহেতু নির্ভর স্তরের কর্মচারীদের মনোবল বৃদ্ধি পায় এবং তারা সুষ্ঠুভাবে সকল কাজ সম্পাদন করতে পারে। যেহেতু উচ্চ স্তরের কর্মচারী এবং নিম্নস্তরের কর্মচারী একই কাতারে এসে কাজ করতে পারে তাই এতে করে সমগ্র প্রশাসনের কাজের মান বৃদ্ধি পায়।

৮) বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করা

আঞ্চলিক পর্যায়ে যখন কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী সমস্যার সম্মুখীন হন সেই ক্ষেত্রে বিচার চাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আসা সম্ভব হয় না। কিন্তু যখন কোন ব্যবস্থাপনায় বিকেন্দ্রীকরণ সংঘটিত হয়ে থাকে তখন যেকোন বিচারপ্রার্থী আঞ্চলিক পর্যায়ে থেকে তার বিচার কার্য সম্পাদন করতে পারেন। এতে করে সার্বিক অর্থের বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন হয় কারণ এখানে সর্বস্তরের মানুষ সমানভাবে বিচারের সুযোগ পায়। 

৯) গতিশীলতা ফিরিয়ে নিয়ে আসা 

যখন কোন ব্যবস্থাপনায় ঊর্ধ্বতন ও কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নিম্নস্তরের কর্মকর্তারা পর্যন্ত সমানভাবে কাজ বন্টনের সুযোগ পায় তখন কাজের গতিশীলতা ফিরে আসে। কারণ এখানে সবাই সবার দায়িত্বটুকু সমান পর্যায়ে ভাগ করে করতে পারে যা প্রশাসনিক গতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য খুবই কার্যকরী।

১০) বাস্তবমুখী উন্নয়ন সাধন করা

আঞ্চলিক পর্যায়ে কোথায় কোথায় বাস্তবমুখী উন্নয়ন করতে হবে তা কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভব হয় না। স্থানীয় এলাকার সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকারের থেকেও বেশি তথ্য থাকে আঞ্চলিক সরকারের কাছে। কোন ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ হলে ওই প্রতিষ্ঠানের আঞ্চলিক প্রশাসন গুলো স্থানীয় পর্যায়ের চাহিদা এবং অভাব গুলো অনুধাবন করতে পারে। এতে করে যে বাস্তবমুখী উন্নয়ন সাধন হয় তা সামগ্রিক দেশের জন্য অত্যন্ত কল্যাণকর।

বিকেন্দ্রীকরণ এর অসুবিধা

বিকেন্দ্রীকরণ কি‌, বিকেন্দ্রীকরণ এর সুবিধা অসুবিধা,

বিকেন্দ্রীকরণের নানাবিদ সুবিধা থাকলেও এর কিছু অসুবিধা রয়েছে। নিচে বিকেন্দ্রীকরণের অসুবিধা গুলো তুলে ধরা হলো:

১) সমন্বয় ও ঐক্যের অভাব 

কেন্দ্রীয় প্রশাসনের হাতে যখন ক্ষমতা থাকে তখন এর আকৃতি ছোট থাকে। কিন্তু বিকেন্দ্রীকরণের ফলে প্রশাসনের আকৃতি ক্রমশ বিশাল আকার ধারণ করে। এই বিশালাকার ব্যবস্থাপনার সমন্বয় সাধন সঠিকভাবে করা না গেলে কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে ঐক্যের অভাব সৃষ্টি হয়, ফলশ্রুতিতে দীর্ঘদিন একটি প্রতিষ্ঠানে বিকেন্দ্রীকরণ বজায় রাখা সম্ভব হয় না।

২) ব্যয়বহুল প্রশাসন ব্যবস্থা 

বিকেন্দ্রীকরণ শুধুমাত্র উন্নত দেশের জন্যই অধিক কার্যকরী হয়ে থাকে। স্বল্পোন্নত দেশ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণ ব্যবহার প্রশাসন ব্যবস্থা হিসেবে চিহ্নিত হয়। যার ফলশ্রুতিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিকেন্দ্রীকরণ একটি ব্যয়বহুল প্রশাসন ব্যবস্থা যা সবসময় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না

৩) দক্ষ নেতৃত্বের অভাব 

কোন ব্যবস্থাপনায় বিকেন্দ্রীকরণ চালু হওয়ার পর থেকে ছোট থেকে বড় উচ্চপদে দক্ষ নেতৃত্বের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু একই প্রতিষ্ঠানে সর্বস্তরে দক্ষ উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। যার ফলে ক্রমশ প্রশাসন ব্যবস্থা দুর্বল হতে থাকে।

৪) জরুরী সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা 

প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ক্ষেত্রে একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে কয়েকটি স্তর পার করে জরুরি ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। কিন্তু যে কোন ব্যবস্থাপনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জরুরী সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন হয় যা ক্ষমতার বিজ্ঞানীজীকরণের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় হয়ে ওঠেনা।

৫) ক্ষমতার অপব্যবহার 

প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ গদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নিম্নবরদস্ত কর্মকর্তাদের হাতে ক্ষমতা বন্টন করা হয়ে থাকে। যেহেতু বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের কাছেই ক্ষমতা ব্যবহারের দায়িত্ব থাকে তাই এক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার হতে পারে। অনুন্নত দেশগুলোতে শাসনতান্ত্রিক ও দুর্নীতির যে চিত্র পাওয়া যায় তা অনেকটাই ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের কারণেই।

৬) অতিমাত্রায় গণতন্ত্র 

আমাদের দেশের মতো আরো অনেক দেশে গণতন্ত্রের শাসনব্যবস্থা একটি জনপ্রিয় শাসন ব্যবস্থা। কিন্তু প্রতি মাত্রই গণতন্ত্র এই শাসনব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্থ করে। কোন প্রশাসনে যখন আয়তকভাবে জনগণের হস্তক্ষেপ সাধিত হয় ঠিক তখনই প্রশাসন সন্তান নিজস্বতা হারাতে থাকে যার ফলে পরবর্তীতে একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়।

৭) নিয়ম নীতি ও পদ্ধতির ভিন্নতা 

প্রশাসনিক বিজ্ঞানিকরণে যখন একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তা বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মচারীদের উপর বর্তায়। কিন্তু এক্ষেত্রে একেক শ্রেণীর মানুষের মতামত একক রকম হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই এক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি এবং পদ্ধতির ভিন্নতা দেখা দেয় প্রতিষ্ঠানে যা প্রতিষ্ঠানের জন্য সুদূরপ্রসারী খারাপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

৮) প্রভাবশালী গোষ্ঠীর দৌরাত্ম

যখন আঞ্চলিক সরকারের হাতে ক্ষমতা বর্তায় তখন আঞ্চলিকভাবে আরো কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য তৈরি হয় যারা স্থানীয়ভাবে নিজেদেরকে নেতা হিসেবে পরিচিত করাতে থাকে। এসব নতুন প্রভাবশালী গোষ্ঠীর উত্থান প্রশাসনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে তৎপর থাকে, যা সার্বিকভাবে দেশের জন্য ক্ষতিকারক।

৯) বিচার ব্যবস্থার সংকীর্ণতা 

স্থানীয় প্রশাসন যখন বিচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভার বহন করে তখন অনেক সময় বিচারের নামে অবিচার দেখা দেয়। তাই যে কোন বিচার ব্যবস্থার ভার সরাসরি আঞ্চলিক সরকারের উপর সম্পূর্ণরূপে রেখে দেওয়া ঠিক নয়।

১০) স্বজন প্রীতির দৌরাত্ম্য

কেন্দ্রীয় প্রশাসন থেকে যখন একটা ক্ষমতা গ্রহণ করা হয় তখন তা স্বজন প্রীতি উদ্দেশ্য করে করা হয় না। কিন্তু আঞ্চলিকভাবে যখন কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় সেখানে আঞ্চলিক নেতাদের দৌরাত্ম থাকে। এতে করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয় এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, যা দেশের জন্য ক্ষতিকর।

বিকেন্দ্রীকরণ সম্পর্কে আমাদের মতামত

কোন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় বিকেন্দ্রিককরণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে কিনা তা অনেকাংশে নির্ভর করে পরিবেশ এবং পরিস্থিতির উপর। কেন্দ্রীয় সমস্যার কথা চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কোন দেশের বা অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানের বিকেন্দ্রীকরণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে কিনা। 

আজকের আর্টিকেলে আমরা বিকেন্দ্রীকরণ কি? বিকেন্দ্রীকরণ এর সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাবেন। এবং এরকম তথ্যবহুল আর্টিকেল পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ে  দেখার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Leave a Comment