বর্তমান দুনিয়ায় আধুনিক প্রযুক্তিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। বলা হয় যে, যে দেশ যতো বেশি প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত সে দেশ ততো বেশি অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে। প্রযুক্তির মাধ্যমে অল্প সময়ে অনেক কাজ মুহুর্তেই করা সম্ভব হচ্ছে।
বর্তমানে আমরা এমন একটি পৃথিবীতে বাস করছি যেখানে প্রযুক্তি ছাড়া কোনো কিছু কল্পনা করাও অসম্ভব। আমরা যদি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের দিকে তাকাই তাহলে সকাল থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানো পর্যন্ত আমরা প্রযুক্তি নির্ভর।
মানুষের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রযুক্তি ও দিন দিন উন্নত করা হচ্ছে। যদি আপনি কল্পনা করেন যে – ২০১০ সালে মোবাইল কেমন ছিল এবং বর্তমানে আপগ্রেড এর কারনে কোথায় এসেছে। এটা কল্পনা করলেই আপনি বুঝে যাবেন প্রযুক্তি ও দিন দিন আধুনিকতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে আমাদের পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হলো আধুনিক প্রযুক্তি। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের চিকিৎসা ক্ষেত্র থেকে শুরু করে নিত্যদিনের জীবন কে অনেক সহজতর করা হচ্ছে। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো আধুনিক প্রযুক্তি কি, সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি কি। আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের বর্তমান পৃথিবী কে কিভাবে পরিবর্তন করে দিবে। পাশাপাশি কয়েকটি আধুনিক প্রযুক্তির নাম ও ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরবো।
আধুনিক প্রযুক্তি কি

আমাদের অনেকের মধ্যেই একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খায় সেটা হলো আধুনিক প্রযুক্তি আবার কি? দেখুন প্রযুক্তির কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও আধুনিক প্রযুক্তি কে এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যা মানুষের জীবন কে অনেক বেশি সুবিধাজনক করতে সক্ষম। আধুনিক প্রযুক্তির মধ্যে কয়েকটি প্রযুক্তি হলো – আর্টিফিসিয়াল ইন্ট্যিলিজ্যান্স (AI), বায়োটেকনোলজি, রোবটিক্স, রিনিউবাল শক্তি এছাড়াও স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ইত্যাদি সব কিছুতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
আধুনিক প্রযুক্তি আবিস্কারের ইতিহাস
আধুনিক প্রযুক্তি একদিনে তৈরি হয়ে যায়নি। আধুনিক প্রযুক্তির ধারনা ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকেই চর্চা করা হতো। আধুনিক প্রযুক্তি নির্মানে অনেক বিজ্ঞানির অবদান রয়েছে। নিচে আমরা কয়েকজন বিজ্ঞানি ও তাদের আবিস্কার গুলো সম্পর্কে সামান্য ধারণা দিলাম:
- আইজ্যাক নিউটন: এই বিজ্ঞানির নাম শুনেননি এমন মানুষ খুজে পাওয়া হয়ত কঠিন। পদার্থবিদ্যা ও ম্যাথম্যাটিক্স এ তার অসামান্য অবদান এর মাধ্যমে তিনি গ্রাভিটি ও মোশন নিয়ে বিভিন্ন থিউরি দিয়েছেন যা মূলত পরবর্তীতে প্রযুক্তি আবিস্কারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় ছিল।
- থমাস এডিসন: আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের ধারণা তিনি প্রকাশ করেছিলেন। বিশ্বে প্রথম ভাল্ব ও ফোনোগ্রাফ আবিস্কার করেন তিনি যা আধুনিক প্রযুক্তির জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
- নিকোলা তেসলা: নিকোলা তেসলা এমন একটি পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছিলেন যা সব কিছু হবে প্রযুক্তি নির্ভর। তিনি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আবিস্কার করেন। উল্লেখ্যযোগ্য আবিস্কার হলো বর্তমান AC বিদ্যুৎ যা আমরা ব্যবহার করি। এ ছাড়াও তার ছাড়াই বিদ্যুৎ সরবরাহ করার প্রযুক্তি তিনি প্রথম সামনে নিয়ে আসেন।
- টিম বার্নারস লী: বর্তমানে আমাদের ইন্টারনেট ছাড়া একটা দিন ও কল্পনা করা যায় না। এই মহান বিজ্ঞানি প্রথম বিশ্বে ওয়েব এর ধারণা নিয়ে আসেন। যা আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ব নির্মানে যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ ছিল।
- এলান টিউরিন: কম্পিউটার আধুনিক প্রযুক্তির একটি আবিস্কার। এলান টিউরিন সর্বপ্রথম কম্পিউটার সাইন্স ও এলগরিদম আবিস্কার করেন।
উপরের লিস্টে দেয়া বিজ্ঞানি ছাড়াও কয়েক হাজার বিজ্ঞানির ভুমিকা রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি নির্মানে। প্রযুক্তি এখনো দিন দিন আপগ্রেড করা হচ্ছে। পুরাতন প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা কে কাটিয়ে নতুন প্রযুক্তি কে আমরা আধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে চিনে থাকি।
আরো পড়ুন: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার
১০ টি আধুনিক প্রযুক্তির নাম
আমরা নিত্যদিনের জীবনে প্রতিদিন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আমরা কি সব আধুনিক প্রযুক্তির নাম ও কাজ সম্পর্কে জানি? নিচে আমরা সেরা ১০ টি আধুনিক প্রযুক্তির নাম ও ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করলাম:
১. আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা AI
বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি আধুনিক প্রযুক্তি হলো আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স। আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স মূলত মানুষের মতই ব্রেইন দক্ষতা সম্পন্ন ভাবে অনেকটা ডিজাইন করা হয়েছে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স কমান্ড এর মাধ্যমে কাজ করতে দক্ষ। অর্থ্যাৎ আপনি যে ধরণের কমান্ড দিবেন সেভাবে আপনাকে আউটপুট দিতে পারবে।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স এর ব্যবহার করা হয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান গুলোতে সবচেয়ে বেশি। সাধারণত মেসিন লার্নিং, ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিং, রোবটিক্স, ভয়েস এসিস্ট্যান্স ইত্যাদি ক্ষেত্রে আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে সাধারণ মানুষের মাঝেও আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স এর ব্যবহার দেখা যায় যেমন – চ্যাটজিপিটি, ক্লাউড এ আই, লিওনার্দো ইত্যাদি। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী দিনে মানুষের জন্য হুমকি হিসেবে কাজ করবে আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স। আপনার কি মনে হয়? আপনার মতামত জানাতে পারেন কমেন্টবক্সে।
২. ৫ জি ইন্টারনেট প্রযুক্তি

আপনি যদি একজন মোবাইল ব্যবহারকারী ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে ৫ জি সম্পর্কে আপনার নিশ্চই উৎকণ্ঠা রয়েছে। ৫ জি কে বলা হয় ৫ম জেনারেসন ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক সিস্টেম। যা ৩জি ও ৪জি নেটওয়ার্ক এর চেয়ে বহুগুনে বেশি গতির ডাটা ট্রান্সফার করতে সক্ষম।
৫জি দিয়ে শুধু স্মার্টফোনের ইন্টারনেট গতি বৃদ্ধি করা হবে বিষয়টা এমন নয় মোটেও বরং ৫ জি সিস্টেম ব্যবহার করে অটোমেসন গাড়ি, স্মার্ট শহড় ইত্যাদি তৈরি করা সম্ভব। যদিও ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে এটি চালু হয়েছে। ৫জি আধুনিক প্রযুক্তি প্রযুক্তির জগতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে।
৩. ব্লকচেইন আধুনিক প্রযুক্তি
আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম একটি নিদর্শন হলো আমাদের টাকা কে আধুনিক ভাবে ডিজিটালাইজড করা। আমরা খেয়াল করলে দেখব আমাদের দেশে ইতিমধ্যেই ডিজিটাল ব্যাংকিং সুবিধা ব্যবহার করা হয়। তবে ডিজিটাল ব্যাংকিং কতটা নিরাপদ সাইবার হামলা থেকে?
মূলত এই প্রশ্নের উত্তর খুজতেই তৈরি করা হয়েছে ব্লকচেইন পদ্ধতি। যা অন্যসব ডিজিটাল ব্যাংকিং থেকে শতভাগ নিরাপদ। ব্লক চেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনে নিরাপদে টাকা লেনদেন করা যায়। বর্তমানে ব্লকচেইন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন ও ইথিরাম কয়েন ইত্যাদি তে। শতভাগ নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হওয়ায় ক্রিপ্টোকারেন্সির জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৪. রোবটিক্স আধুনিক প্রযুক্তি
আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম একটি উদাহরণ হলো রোবটিক্স। রোবটিক্স কে অনেকটা মানুষের মত করে ডিজাইন করা হয়েছে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স এর মাধ্যমে মানুষের মত করেই অনেক ধরণের কাজ রোবট এর মাধ্যমে করানো হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে যেখানে মানুষের কাজ করা অসম্ভব সেখানে রোবটের মাধ্যমে সহজেই কাজ করানো হচ্ছে।
শুধু ফ্যাক্টরি নয় বরং বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের দায়িত্ব নিতেও দেখা যায়। মেডিক্যেলে অনেক ধরণের অপারেসন এর ক্ষেত্রে রোবট প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপদ ভাবে অস্ত্রপাচার করা সম্ভব করা হচ্ছে। ড্রোন এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের সুবিধা প্রদান করা হয়। ড্রোন ও মুলত একটি রোবটিক্স আধুনিক প্রযুক্তির আবিস্কার।
৫. ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আধুনিক প্রযুক্তি

বর্তমান সময়ে বিশ্বের সব বড় প্রযুক্তি কোম্পানি গুলো ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। VR মুলত একটি ভার্চুয়াল জগত তৈরি করতে সক্ষম। আপনি অনলাইনে সার্চ দিলে প্রচুর পরিমানে VR গ্লাস পাবেন। যা চোখে পড়ার মাধ্যমে আপনি ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ করতে পারবেন। মূলত এই প্রযুক্তি আবিস্কার করা হয়েছে গেমিং, শিক্ষা, সময় কাটানোর জন্য।
যেখানে আপনি বাসায় বসেই বিভিন্ন দরণের জিনিস এর স্বাদ নিতে পারবেন। সবচেয়ে জনপ্রিয় কোম্পানি মেটা ও এপল ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে যেভাবে উঠেপরে লেগেছে আগামীতে বেশিদিন সময় লাগবে না ভার্চুয়াল রিয়েলিটি তৈরি করতে।
আরো পড়ুন: পারিবারিক বাজেট কাকে বলে? পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম
৬. ইন্টারনেট
ইন্টারনেট আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম আবিস্কার। যেখানে একটি স্থানে বিশ্বের সমস্ত ডিভাইস গুলো কানেক্টেড থেকে ডাটা ট্রান্সফার করতে পারে। বর্তমানে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্ট হোম তৈরি করা সম্ভব। যেখানে আপনি বাসায় না থেকেও বাসার টিভি, লাইট, তালা, ফ্রিজ ইত্যাদি সব কিছু নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন।
প্রযুক্তির আপগ্রেড এর ফলে কিছু বছর পরে হয়ত ইন্টারনেট মানুষের জীবনের মৌলিক চাহিদার মধ্যে একটি হতে চলেছে।
৭. কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রযুক্তি

কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রযুক্তি বুঝতে হলে সবার আগে আপনাকে বুঝতে হবে কম্পিউটার কি আর কিভাবে কাজ করে। কম্পিটার মূলত একটা গননাকারি যন্ত্র। কম্পিউটার কাজ করে বিটস নিয়ে। সাধারণ কম্পিউটার গুলো দিয়ে সাধারণ কাজ করা গেলেও অনেক বড় ধরণের ক্যালকুলেসন এর ক্ষেত্রে সাধারণ কম্পিউটার পারফর্ম করতে পারে না।
বিজ্ঞানিদের বড় বড় ক্যালকুসেন এর জন্য ব্যবহার করা হয় কোয়ান্টাম কম্পিউটার। যা মূলত কিউবিটস দিয়ে তৈরি করা হয়। যা দিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেক বড় বড় ম্যাথমেটিকাল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করা হয় – ক্রিপ্টোথ্রেপি, ড্রাগ ডিসকভারি, বিজ্ঞান গবেষনা ইত্যাদি কাজে যা সাধারণ উচ্চ মানের কম্পিউটার করতে অক্ষম।
আরো পড়ুন: পারিবারিক বাজেট কাকে বলে? পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম
৮. রেনিউএবল এনার্জি প্রযুক্তি
এই প্রযুক্তি গুলো প্রকৃতিক ভাবে শক্তি সঞ্চালন করতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ্য যোগ্য হলো প্রকৃতিক ভাবে শক্তি ধারণ করে সরবরাহ করা। যেমন:
- সোলার সিস্টেম – যা সূর্যের আলোর মাধ্যমে শক্তি ধারণ করে ইলেক্ট্রিসিটি দিতে সক্ষম।
- ওয়াইন্ড – বাতাসের গতিবেগের মাধ্যমে ইলেক্ট্রিসিটি দিতে পারে।
আপনি নিশ্চই মহাকাস গবেশনা কেন্দ্র অথবা স্যালেটাইল সম্পর্কে শুনেছেন। এসকল প্রযুক্তি তে ইলেক্ট্রিসিটির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে সোলার সিস্টমে। মানুষের মাঝেও সোলার সিস্টেমের ব্যবহার অনেক বেশি দেখা যায়। প্রত্যন্ত এলাকাতেও সোলার সিস্টেম ব্যবহার করে ইলেক্ট্রিসিটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে এই আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে।
৯. জেনেটিক প্রযুক্তি

জেনেটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় সবচেয়ে বেশি চিকিৎসা ক্ষেত্রে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নতির প্রধান একটা মাধ্যম হলো জেনেটিক প্রযুক্তির ব্যবহার। জেনেটিক প্রযুক্তি সরাসরি ডি এন এ দেখতে সম্ভব। যার মাধ্যমে অনেক ধরণের কঠিন রোগ খুব সহজেই শানাক্ত করা যায়।
জেনেটিক প্রযুক্তি অনেক ধরণের ঔষধ তৈরি করতেও লাগে। তবে শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্রেই নয় বরং কৃষি ক্ষেত্রেও নানান ভাবে উপকারিতা করে জেনেটিক প্রযুক্তি।
১০. থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি
আধুনিক প্রযুক্তির মধ্যে থ্রিডি প্রযুক্তি অনেক বেশি জনপ্রিয়। থ্রিডি প্রিন্টিং এর মাধ্যমে থ্রি ডাইমেন্সনাল বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা যায়। থ্রিডি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরণের সার্কিট, বোর্ড ইত্যাদি ম্যানুফ্যাকচার করা অনেক বেশি সহজ।
স্বাস্থ খাতেও অনেক ভাবে কাজ করে থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি। এ ছাড়াও ফ্যাসন কাস্টমাইজেসন এর জন্য থ্রিডি প্রিন্টিং অনেক বেশি জনপ্রিয়।
আরো পড়ুন: ব্যবস্থাপনা কাকে বলে? ব্যবস্থাপনা কত প্রকার ও কি কি
সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি কি

উপরে আমরা ১০ টি আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। তবে সময়ের সাথে সাথে আধুনিক প্রযুক্তির জনপ্রিয়তা পরিবর্তন হয়। বর্তমান সময়ে সারাবিশ্বে সবচেয়ে আধুনিক একটি প্রযুক্তির নাম হলো – কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা AI. বর্তমান পৃথীবিতে সবচেয়ে বহুল আলোচিত বিষয় এটি। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা মূলত মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এটাকে এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যা মানুষের ব্রেইনের মত কমান্ড বুঝে কাজ করতে সক্ষম।
অর্থ্যাৎ যদি আপনি কাউকে বলেন যে এটা করো উক্ত ব্যাক্তি সেটা যেমন আপনার কথা অনুযায়ী করে দিবে অন্যদিকে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ঠিক একই ভাবে করে দিতে সক্ষম। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা আর মানুষের ব্রেইনের মাঝে বিস্তর তফাত রয়েছে। তবে মানুষের মতই ডিসিসন নিতে পারে, ভাষা তৈরি করতে পারে, ছবি শনাক্ত করতে পারে এমন কি তার মধ্যে ক্রিয়েটিভিটি ও রয়েছে।
আরো পড়ুন: ড্রপশিপিং কি? ড্রপশিপিং ব্যবসা থেকে আয় করে কিভাবে
কেন কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা কে এ সময়ের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি বলা হয় কিন্তু কেন? চলুন আমরা বিস্তারিত ভাবে জানার চেষ্টা করি –
জেনারেটিভ বুদ্ধিমত্তা: বর্তমানে অনেক টেক্সট ব্যাজড ওপেন এ আই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা কে অন্যন্য স্তরে পৌছে দিয়েছে। ওপেন এ আই বা চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের লেখা, ইমেজ, প্রোগ্রামিং কোড, স্ক্রিপ্ট, কনটেন্ট ক্রিয়েসন আইডিয়া, গেম তৈরি, সফটওয়্যার তৈরি ইত্যাদি অনেক অনেক কাজ কয়েক মিনিটে করে নেয়া সম্ভব।
মনে করুন, আপনার একটি সিভি অথবা এপলিকেসন লিখতে হবে ৫ মিনিটের মধ্যে। কিন্তু আপনি কতটা সঠিক ভাবে পারবেন? কিন্তু চ্যাটজিপিটি মাত্র কয়েক সেকেন্ডে একই কাজ নির্ভুল ভাবে করে দিতে সক্ষম হচ্ছে। যদিও চ্যাটজিপিটি এখনো সকল ভাষায় দক্ষ নয় তবে আগামীতে চ্যাটজিপিটি মানুষের কাজ অনেক বেশি সহজ করে দিতে পারবে।
সকল স্থানে ব্যবহার: কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা জনপ্রিয় আধুনিক প্রযুক্তি হওয়ার আরো একটি কারণ হলো এটা সকল ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। বিশেষ করে দেখা যায় স্বাস্থ্য খাতে ঔষধ তৈরি করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরণের ব্যাংকিং ডিজিটাল লেনদেন এর ক্ষেত্রে। সেলফ ড্রাইভিং গাড়ির ক্ষেত্রে ব্যবহার কয়া হচ্ছে। ক্রিয়েটিভ কাজ যেমন: ডিজিটাল আর্ট ও মিউজিক তৈরির ক্ষেত্রেও কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অন্য প্রযুক্রির সাথে সংযোগ: কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা শুধু একা কাজ করে ব্যাপার টি মোটেও এমন নয়। বরং অন্য সব আধুনিক প্রযুক্তির সাথে কাজ করতে সক্ষম। যেমন ধরুন – ইন্টারনেট ও একটা প্রযুক্তি সেখানে কাজ করছে, কোয়ান্টাম কম্পিউটারে কাজ করছে, ব্লকচেইন প্রযুক্তি তে কাজ করছে, বিভিন্ন প্রোগ্রামিং বা কোডিং এর ক্ষেত্রে ইন্টিগ্রেড হয়ে কাজ করছে। এর ফলে দিন দিন মানুষের আস্থার যায়গা দখল করে নিয়েছে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা।
এ ছাড়াও কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা অনেক ভাবে মানুষের নিত্যদিনের কাজের সাহায্য করে যাচ্ছে। যার ফলে বলা যায় বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আধুনিক একটি প্রযুক্তির নাম হলো কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স।
আরো পড়ুন: কেন্দ্রীকরণ কি? কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ পার্থক্য
আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা
আধুনিক প্রযুক্তি বর্তমান বিশ্ব কে ডিজিটাইলজড করতে সক্ষম হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা অনেক আছে। নিচে আমরা কয়েকটি আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা উল্লেখ্য করে দিলাম –
- আধুনিক প্রযুক্তি যোগাযোগ ক্ষেত্রে অনেক বেশি উন্নয়ন করতে পেরেছে। বর্তমানে আমরা ইন্টারনেট অথবা স্মার্টফোন ব্যবহার করে বিশ্বের যে কোনো স্থানে কয়েক সেকেন্ডে রিয়েল টাইম যোগাযোগ করতে পারি। ইন্টারনেট কানেকসন এর মাধ্যমে একই সাথে ভিডিও তে দেখতেও পারি।
- ইন্টারনেটে প্রচুর পরিমানে তথ্য থাকার কারনে মুহুর্তের মধ্যে যে কোনো ধরণের তথ্য সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানতে পারি। যা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক একটি বিষয়।
- অনলাইনের প্রতি নির্ভরশীলতার মাধ্যমে অনলাইনে মানুষ আয়ের স্বপ্ন দেখে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে।
- মেডিকেলে গুরুত্বপূর্ণ সব সার্জারি গুলো প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ার ফলে সফলতার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ব হওয়ায় অর্থনৈতিক ভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে উন্নত করা সম্ভব।
- কৃষিখাতে প্রযুক্তির ব্যবহার ফশল উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে।
এ ছাড়াও অনেক ধরণের সুবিধার দিক আমরা দৈনন্দিন জীবনে ভোগ করি। প্রযুক্তির যেমন সুবিধার দিক রয়েছে প্রযুক্তির বাজে ব্যবহার ঠিক একই ভাবে অসুবিধার দিক গুলো বাস্তবায়িত করে। চলুন দেখে নেই আধুনিক প্রযুক্তির কিছু অসুবিধা সম্পর্কে।
আরো পড়ুন: পারিবারিক আয় ও ব্যয় কাকে বলে
আধুনিক প্রযুক্তির অসুবিধা
আমরা দিন দিন অনেক বেশি প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠছি যার ফলে আমাদের ক্রিয়েটিভ কাজের তালিকা কমছে। মানুষের কাজ করার আগ্রহ দিন দিন কমছে। আধুনিক প্রযুক্রির বেশি ব্যবহার যেসব অসুবিধার দিক আছে সেগুলো হলো:
- প্রযুক্তির অন্যতম উদ্ভাবন হলো সোশ্যাল মিডিয়া। এটা একদিকে যেমন প্রচুর সুবিধার দিক রয়েচে অন্যদিকে এর ফলে মানুষ আগের তুলনায় অনেক বেশি সময় অপচয় করে। সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তির ফলে মানুষের ব্রেইনের কার্যক্ষমতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
- আধুনিক প্রযুক্তিতে সব কিছুই প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ায় সাইবার অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনলাইনে যে কারো ইনফরমেসন খুব দ্রুত হারে ছড়িয়ে যাচ্ছে। মানুষের প্রাইভেসি বলতে কিছুই থাকছে না।
- কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবট এর ফলে জব সেক্টরে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সাধারণ কাজের জন্য যেখানে একজন মানুষের জব পোস্টিং ছিল সেটা প্রযুক্তি উন্নত হওয়ার কারনে ব্যাহত হয়েছে।
- প্রযুক্তির অধিক ব্যবহার আমাদের শারিরিক বিভিন্ন সমস্যার জন্য দায়ী। বিশেষ করে চোখ ও ব্রেইন মানুষের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।
- প্রযুক্তির মাধ্যমে নানান ভাবে মানুষ কে হয়রানীর ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দ্রুত ছড়াচ্ছে গুজব।
- অপরাধীদের অপরাধ ও এখন প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে যাচ্ছে। যেখানে প্রতিদিন মানুষের গোপন ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া, সাইবার হামলার মাধ্যমে ব্যাংক লুট করা, বিভিন্ন মাধ্যমে ডিজিটাল ভাবে অর্থপাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রযুক্তির সুবিধার দিক বহন এর পাশাপাশি প্রযুক্রির অসুবিধার দিক গুলোকেও মাথায় রেখে আপনাকে ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে নিরাপদ ইন্টারনেট সকলের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ দাবি।
আরো পড়ুন: কম খরচে ইউরোপের কোন দেশে যাওয়া যায়
যান্ত্রিক প্রযুক্তি কাকে বলে

যান্ত্রিক প্রযুক্তি যাকে ইংরেজি তে (Mechanical Technology) বলা হয়। যান্ত্রিক প্রযুক্তি হলো এক ধরণের টুলস বা মেশিন যা দিয়ে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা সমাধান করা হয়। অনেক ধরণের যান্ত্রিক প্রযুক্তি রয়েছে। যেমন: বিমান চলাচলের জন্য এক ধরণের যান্ত্রিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় আবার কৃষি কাজে সেচ দেয়ার জন্য আরেক ধরণের যান্ত্রিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
নিচে আমরা কয়েকটি যান্ত্রিক প্রযুক্তির নাম ও ব্যবহার দিয়ে দিলাম:
যান্ত্রিক প্রযুক্তির নাম ও ব্যবহার
যান্ত্রিক প্রযুক্তি অনেক রয়েছে সব গুলো প্রযুক্তি সম্পর্কে একটি আর্টিকেলে লেখা অনেকটাই অসম্ভব। তাই এখানে আমরা বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় যান্ত্রিক প্রযুক্তির নাম ও ব্যবহার লিখে দিলাম:
১. ইন্ট্যারন্যাল কম্বাসন ইঞ্জিন
এই যান্ত্রিক প্রযুক্তি মূলত বিভিন্ন ধরণের পাওয়ার অটোমোবাইল এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। মোটরবাইক, এয়ারপ্লেন এবং বিভিন্ন ধরণের গাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
২. গিয়ার

আমরা সাইকেল চালিয়েছি তাদের কাছে এই প্রযুক্তি বেশ পরিচিত। বিভিন্ন ধরণের ফ্যাক্টরি ও সাইকেল বাইসাইকেলে এই ধরণের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৩. হিট এক্সচেঞ্জার
গরম তাপ কে বের করে দিয়ে ঠান্ডা বাতাস প্রদান করে এই প্রযুক্তি। এটা ব্যবহার করা হয় রেফ্রিজারেটর, এসি, পাওয়ার প্লান্ট ইত্যাদি সেক্টরে।
আরো পড়ুন: সরকারি ভাবে ইউরোপ যাওয়ার উপায়
৪. টারবাইন
টারবাইন এর মাধ্যমে প্রকৃতিক উপায় শক্তি সঞ্চার করা হয়। টারবাইনের মাধ্যমে বাতাস এর মাধ্যমে শক্তি ধারণ করে ইলেক্ট্রিসিটি প্রদান করে।
৫. এলিভেটর
আমরা বড় বিল্ডিং গুলোতে অবশ্যই লিফট সিস্টেম ব্যবহার করি। লিফট এর মাধ্যমে সহজেই এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে অল্প সময়ের মধ্যে যাতায়াত করতে পারি। মূলত লিফট সিস্টেমে ব্যবহার করা হয় এলিভেটর যান্ত্রিক প্রযুক্তি।
৬. ক্রেন

আমরা অনেকেই হয়ত ক্রেন প্রযুক্তি দেখি যা দিয়ে অনেক ভারী জিনিস পত্র এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজেই নেয়া যায়।
উপরে দেয়া প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়াও অনেক কাজেই যান্ত্রিক প্রযুক্তি অনেক বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমাদের প্রযুক্তি নির্ভর দুনিয়া কে অন্য এক মাত্রা যুক্ত করেছে যান্ত্রিক প্রযুক্তি।
আরো পড়ুন:
- ছাত্র জীবনে টাকা আয় করার উপায়
- মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করার উপায়
- বিকেন্দ্রীকরণ কি? বিকেন্দ্রীকরণ এর সুবিধা অসুবিধা
আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে আমাদের মতামত
আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপন কে অনেক বেশি সহজ করে দিয়েছে। আমরা দিন দিন অনেক বেশি প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পরছি। আধুনিক প্রযুক্তি কি আর্টিকেলে আমরা অনেক গুলো বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করলাম। এখানে আমরা বেশ কয়েকটি আধুনিক প্রযুক্তির তালিকা ও কিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে সে সম্পর্কেও উল্লেখ করলাম। তবে আপনাদের যদি আরো কোনো প্রশ্ন থাকে তবে আমাদের কে মন্তব্য করে জানাতে পারেন।