প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আসসালামু আলাইকুম। আমাদের আজকের আর্টিকেলে ব্যবস্থাপনা কাকে বলে? ব্যবস্থাপনা কত প্রকার ও কি কি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। যখন কোন একটি নির্দিষ্ট লক্ষ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এক বা একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত কোন একটি গোষ্ঠীর উপর কর্তৃত্ব স্থাপন এবং নিয়ন্ত্রণ করা হয় তখন তাকে ব্যবস্থাপনা বলে।
আরো সহজ করে বলতে গেলে, যখন একটি প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে এবং প্রতিষ্ঠানটি সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রতিষ্ঠানের সম্পদ গুলোকে কার্যকর ভাবে ব্যবহার করে তখন তাকে ব্যবস্থাপনা বলে। ব্যবস্থাপনার মূল কাজ হলো পরিকল্পনা করা, সংগঠন করা, কর্মী সংস্থান করা, নির্দেশনা দান করা এবং সমন্বয় সাধন করা। ব্যবস্থাপনার দিক বিবেচনা করলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দু ধরনের উপকরণ প্রয়োজন হয়। যথা: মানবীয় উপকরণ ও বস্তুগত উপকরণ। চলুন তাহলে ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করা যাক।
ব্যবস্থাপনা কাকে বলে

ব্যবস্থাপনা শব্দের ইংরেজি পারিভাষিক শব্দ হলো “Management”, যা ইতালিয় বা ল্যাটিন Maneggiare শব্দ থেকে এসেছে। Maneggiare শব্দটির অর্থ হল “to train up the horses” এর অর্থ হল একটি ঘোড়াকে প্রশিক্ষিত করে তোলা। ম্যানেজমেন্ট শব্দটির সমার্থক শব্দ হিসেবে to handle শব্দটি ব্যবহার করা যেতে পারে। ম্যানেজমেন্ট শব্দটিকে আবার অনেকে Manage + Men + T (Tactfully) ব্যবহার করে থাকেন। অর্থাৎ যখন কোন মানুষকে কৌশলে ব্যবহার করা হয় তখন তাকে ম্যানেজমেন্ট বলা যেতে পারে।
প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য থাকে। যখন একটি প্রতিষ্ঠাতা নিজস্ব লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য পূরণের জন্য বিভিন্ন কার্যাবলী পরিচালনা করে থাকে তখন তাকে ব্যবস্থাপনা বলে। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানটার লক্ষ্য অর্জন করার জন্য প্রথমত পরিকল্পনা করে, অতঃপর সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা দান, সমন্বয় সাধন এবং সর্বশেষ নিয়ন্ত্রণ কার্য পরিচালনা করে থাকে।
প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য যে মানবীয় উপকরণের প্রয়োজন হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো মানুষ। মানুষ বা জনশক্তি প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের মূল চালিকাশক্তি। অন্যদিকে বস্তুগত উপকরণের মধ্যে রয়েছে যন্ত্রপাতি, মালামাল বা কাঁচামাল, অর্থ, বাজার ও পদ্ধতি। বস্তুগত উপকরণ গুলো কে ইংরেজিতে 6m (Men, Machine, Material Money, Market & Method) নামে চেনা হয়ে থাকে। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যে অর্জনের জন্য জনশক্তির পাশাপাশি বস্তুগত উপকরণের বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে।
আরো পড়ুন: মোবাইল ব্যাংকিং কি? মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা ও অসুবিধা
আধুনিক ব্যবস্থাপনা কাকে বলে
আধুনিক ব্যবস্থাপনা হলো একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্পের লক্ষ্য অর্জনের জন্য মানবিক, বস্তুগত এবং আর্থিক দিকগুলোকে কার্যকর রূপে ব্যবহার করে। আধুনিক ব্যবস্থাপনা একটি গতিশীল প্রক্রিয়া যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হতে থাকে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে থাকে। আধুনিক ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্য হলো:
- উৎপাদন বা সেবার পরিমাণ বৃদ্ধি,
- গুণগত মান উন্নয়ন করা,
- কর্মচারীদের উৎসাহ প্রদান করা,
- সামাজিকভাবে সকল দায়িত্ব পালন করা।
আধুনিক ব্যবস্থাপনার নানাবিধ সুবিধা থাকলেও এর কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চ্যালেঞ্জগুলো হল:
- বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করছে,
- প্রতিনিয়ত প্রযুক্তিগত পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে,
- দক্ষ কর্মচারী খুঁজে পাওয়া এবং ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে,
- বিশ্বব্যাপী ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
সর্বোপরি আধুনিক ব্যবস্থাপনা একটি জটিল প্রক্রিয়া যা প্রতিষ্ঠানের সফলতা নিশ্চিত করার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া আধুনিক ব্যবস্থাপনা একটি গতিশীল প্রক্রিয়া যা যেকোনো পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং প্রযুক্তির সাথে প্রতিনিয়ত নিজেকে আপডেট করতে পারে।
আরো পড়ুন: বিকেন্দ্রীকরণ কি? বিকেন্দ্রীকরণ এর সুবিধা অসুবিধা
ব্যবস্থাপনা কত প্রকার ও কি কি
প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ব্যবস্থাপক প্রয়োজন হয়। প্রতিষ্ঠানের এই স্তর অনুযায়ী ব্যবস্থাপকের শ্রেণীবিন্যাস করা হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানে যেহেতু একাধিক পদে ব্যবস্থাপক থাকে সেহেতু ব্যবস্থাপনার স্তর তাদের পদমর্যাদাগত অংশ। বড় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তিন ধরনের ব্যবস্থাপনা স্তর পরিলক্ষিত করা যায়। নিচে আমরা সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করছি। ব্যবস্থাপনা তিনটি প্রকার হলো:
- কার্যকলাপ ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা,
- স্তরভিত্তিক ব্যবস্থাপনা,
- ক্ষেত্র বিশেষ ব্যবস্থাপনা
১) কার্যকলাপ ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা

কার্যকলাপ ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা কে ইংরেজিতে বলা হয়ে থাকে Performance Management. এটি এমন একটি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি যেখানে কোন ব্যক্তি বা দলের কাজের ফলাফল কে মূল্যায়ন করা হয় এবং সেই ফলাফলের ভিত্তিতে তাদের কাজের মান উন্নত করার চেষ্টা করা হয়। কার্যকলাপ ভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় স্পষ্ট লক্ষ্য থাকে এবং এই পদ্ধতিতে সকলেই জানে তাদেরকে কি কি করতে হবে। এছাড়া এই পদ্ধতিতে কর্মচারীদের কাজের মান উন্নত হয় এবং মূল্যায়ন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ থাকে। সর্বোপরি কর্মচারীদের কাজে আরো বেশি উৎসাহী করার জন্য কার্যকলাপ ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত ফলপ্রসু ভূমিকা পালন করে। কার্যকলাপ ভিত্তিক শ্রেণীবিন্যাস এর মধ্যে অন্যতম ধাপ গুলো হলো:
- কর্মী সংস্থান করা এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করা,
- নির্দেশনা দান করা এবং তাদেরকে অনুপ্রাণিত করা,
- কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা সর্বোপরি সংশোধন করা,
- ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করা,
- কাজের বিভিন্ন অংশকে ভাগ করে নেওয়া।
২) স্তরভিত্তিক ব্যবস্থাপনা

স্তর ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা বলতে বোঝায় কোন একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্তরে ব্যবস্থাপকদের পদমর্যাদা গত অবস্থানকে। স্তরভিত্তিক ব্যবস্থাপনা নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের আকার আকৃতির উপর। যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো তুলনামূলক বড় সেসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে তিনটি স্তর থাকে। সেগুলো হল:
- উচ্চ স্তর,
- নিম্নস্তর,
- মধ্যস্তর।
স্তরভিত্তিক ব্যবস্থাপনার নানা রকম গুরুত্ব রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো: সঠিকভাবে কাজের দায়িত্ব বন্টন করে নেওয়া, বিভিন্ন স্তরের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করে চলা, কাজের মান নিয়ন্ত্রণ করা এবং নিশ্চিত করা। এবং স্তরভিত্তিক ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এই স্তরে প্রত্যেক শ্রেণীর কর্মকর্তা এবং কর্মচারী দক্ষতা বৃদ্ধির পর্যাপ্ত সুযোগ পেয়ে থাকে। তবে স্তরভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় যোগাযোগের জটিলতা থাকে, এটি একটি ব্যয়বহুল ব্যবস্থাপনা এবং সর্বোপরি এই ব্যবস্থাপনায় নমনীয়তা কম।
৩) ক্ষেত্র বিশেষ ব্যবস্থাপনা

ক্ষেত্র বিশেষ ব্যবস্থাপনা হলো কোন একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্র বা শিল্পের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা ব্যবস্থাপনা এবং কৌশল। এই ব্যবস্থাপনা সাধারণ ব্যবস্থাপনার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। তাছাড়া এই ধরনের ব্যবস্থাপনায় নিজস্ব কিছু চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ থাকে যার কারণে অন্যান্য ব্যবস্থাপনা থেকে এর বেশ ভিন্নতা রয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষ ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল:
- নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের জ্ঞান এবং দক্ষতার মাধ্যমে ব্যবস্থাপকরা আরো ভালোভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে এবং সমস্যার সমাধান করতে পারে।
- ক্ষেত্র বিশেষ জ্ঞান প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিদের থেকে এক ধাপ এগিয়ে রাখতে।
- নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে চাহিদা এবং প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা কৌশল গুলোকে সামঞ্জস্য করা হলে পরবর্তীতে কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
ক্ষেত্র বিশেষ ব্যবস্থাপনার নানাবিদ সুবিধা থাকলেও এর কিছু অসুবিধা রয়েছে। সেগুলো হলো:
- প্রযুক্তি এবং বাজার পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
- ক্ষেত্র বিশেষ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় দক্ষ কর্মচারী খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয় না।
- প্রতিটা ক্ষেত্রে নিজস্ব জটিলতা থাকে যা ব্যবস্থাপনাকে চ্যালেঞ্জিং করে তোলে।
আরো পড়ুন: সরকারি ভাবে ইউরোপ যাওয়ার উপায়
ব্যবস্থাপনার কার্যাবলী কি
প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান তার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যবস্থাপকরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে। ব্যবস্থাপনার প্রধান কার্যাবলী গুলো হল:
- পরিকল্পনা গ্রহণ করা, এবং তার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নির্ধারণ করা,
- লক্ষ অর্জনের জন্য কৌশল নির্ধারণ করা,
- সম্পদের বরাদ্দ রাখা এবং সারা বছর সেই বাজেট অনুযায়ী কাজ করা।
ব্যবস্থাপনার অন্যতম কার্যাবলী হলো সংগঠন। সংগঠনের কাজগুলো হলো:
- বিভাগ ও দল গঠন করে সেই অনুযায়ী কাজ করা,
- কর্মচারীদের জন্য কাজ বরাদ্দ রাখা,
- কাজকে বিভিন্ন অংশে ভাগ করে দেওয়া।
ব্যবস্থাপনার আরেকটু গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলী হলো কর্মী সংস্থান। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার কাজগুলো হলো:
- যোগ্য কর্মী নির্বাচন করা,
- কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া,
- কর্মচারীদের মূল্যায়ন করা।
নির্দেশনা ব্যবস্থাপনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। নির্দেশনার কাজগুলো হলো:
- কর্মচারীদের কাজ সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান করা,
- কর্মচারীদের নেতৃত্ব প্রদান করা,
- কর্মচারীদের অনুপ্রাণিত করে তোলা।
ব্যবস্থাপনা কার্যাবলীর সর্বশেষ ধাপ হল সমন্বয় এবং নিয়ন্ত্রণ করা। সমন্বয়ে এবং নিয়ন্ত্রণের কাজগুলো হলো:
- বিভিন্ন বিভাগের কাজকে একত্রিত করা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা,
- সকল ধরনের সমস্যার সমাধান করা,
- সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা,
- কাজের অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করা,
- সকল ধরনের ছোট বড় ভুল ত্রুটি সংশোধন করা,
- সারা বছরের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা।
ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্য
ব্যবস্থাপনা হলো একটি চলমান প্রক্রিয়া যেখানে সাংগঠনিক সম্পদ এবং কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা কে ব্যবহার করে উদ্দেশ্যে অর্জন করা হয়ে থাকে। ব্যবস্থাপনার প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলো হল:
১) বহুমুখী
ব্যবস্থাপনা যে কোন সংগঠনের ক্রিয়া কলাপ কে একত্রিত করতে পারে। যেহেতু ব্যবস্থাপনার প্রতিটি দিক ভিন্ন হয়ে থাকে সেহেতু ব্যবস্থাপনায় প্রচুর পরিমাণে দক্ষ মানুষের প্রয়োজন হয়। ব্যবস্থাপনার কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য পরিকল্পনা, সংগঠিত, ও নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবস্থাপনায় মানুষের ক্ষেত্রে কর্মী এবং নির্দেশনা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি কাজ সম্পাদন করার ক্ষেত্রে সংস্থার উৎপাদন, ক্রয় ও বিক্রয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২) গতিশীল
ব্যবসায়ের পরিবেশ প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হতে থাকে। কারণে ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, বাজারের প্রবণতা এবং নিয়ন্ত্রণমূলক ঘোষণা। ব্যবস্থাপনা যেহেতু প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয় তাই ব্যবস্থাপনায় নানা ধরনের কাঠামো পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে। তাই ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল হওয়া একান্ত জরুরী।
৩) দলগত কার্যক্রম
কর্মীদের মধ্যে যদি প্রপার বন্ডিং না থাকে তাহলে সে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা বেশ নাজুক হয়ে পড়ে। ব্যবস্থাপনার সাহায্যে যেকোনো সংস্থার লক্ষ্য অর্জন করার জন্য কর্মীদের মধ্যে অবশ্যই দলগতভাবে কাজ করার প্রবণতা থাকতে হবে। একটি ব্যবস্থাপনার তখনই সফল হয় যখন সেখানে থাকে কার্যকর যোগাযোগ, সহযোগিতা ও দলগত কাজের প্রবণতা। একটি সংগঠনের লক্ষ্য তখনই অর্জিত হবে যখন কর্মীদের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরি হবে। এবং সেখানে একটি সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করে তুলতে হবে।
৪) লক্ষ্যভিত্তিক
একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়ে থাকে লক্ষ্য অর্জন করার জন্য। অর্থাৎ কাজের শুরুতে তারা লক্ষ্য নির্ধারণ করে থাকে এবং সেই লক্ষ্য অনুযায়ী ধীরে ধীরে তারা এগোতে থাকে। লক্ষ্য নির্ধারণ করার ফলে সাংগঠনিক সম্পদ এবং কর্মচারীর কর্মদক্ষতা কে ব্যবহার করে উদ্দেশ্যে অর্জন করা সহজ হয়। লক্ষ্য বিহীন ব্যবস্থাপনা মৃত ব্যবস্থাপনার অনুরূপ।
৫) সিদ্ধান্ত গ্রহণ
ব্যবস্থাপনার শুরুতে যখন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তখনই সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার প্রবণতা থাকতে হবে। কোন প্রতিষ্ঠান যখন সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চায় তখন সেই প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই সঠিক তথ্য সংগ্রহ, বিকল্পগুলির বিশ্লেষণ, সর্বোত্তম পদক্ষেপ নির্বাচন করার জন্য বিশেষভাবে পর্যালোচনা করতে হবে।
৬) অস্পর্শনীয়
ব্যবস্থাপনা উন্নত কর্মদক্ষতার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু ব্যবস্থাপনাকে ছুঁয়ে দেখা যায় না এবং অনুভব করা যায় না। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা কেমন হচ্ছে তাও ব্যবস্থাপনারই অংশ। সুতরাং এই অস্পর্শ নিয়ে ব্যবস্থাপনা কে সঠিক রূপে ব্যবহারের তাগিদ অবশ্যই থাকতে হবে।
আরো পড়ুন: কেন্দ্রীকরণ কি? কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ পার্থক্য
ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব
যেকোনো ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার জন্য অবশ্যই ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা থাকতে হবে। নিচে ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য গুলো তুলে ধরা হলো:
- লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য অর্জন করা,
- সম্পদের দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করা,
- শক্তিশালী একটি দল গড়ে তোলা,
- পরিবর্তনের সাথে প্রতিনিয়ত নিজেকে মানিয়ে নেওয়া,
- সমাজের উন্নয়নে সহযোগিতা করা,
- উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা,
- ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে অর্জন করা।
যে কোন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার প্রথম পর্যায়ে থেকে পরিকল্পনা, সংগঠিত, নেতৃত্ব এবং নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয় যা প্রথম অবস্থায় নির্দিষ্ট অবস্থায় থাকে এবং পরবর্তীতে দক্ষতার সাথে উদ্দেশ্যগুলি পূরণ হতে থাকে। যখন কোন প্রতিষ্ঠান দক্ষ হবে সম্পদের ব্যবহার করে তখনই সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়। কার্যকরী ব্যবস্থাপনার জন্য কর্মীদের দলগত কাজকে উৎসাহিত করতে হবে এবং ইতিবাচক কাজের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
যেহেতু তথ্যপ্রযুক্তিগত নানা ধরনের পরিবর্তন আসছে সেহেতু ব্যবস্থাপনা এমন হতে হবে যেন তা সকল ধরনের পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলতে পারে। সঠিক পদ্ধতিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সুলভ মূল্যে ভালো মানের পণ্য কাস্টমারের হাতে তুলে দেওয়া ব্যবস্থাপনার অন্যতম মূলনীতি, এটিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। সর্বোপরি, প্রতিষ্ঠানে প্রত্যেক কর্মচারী কাজ করে ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য। এদিক থেকে প্রত্যেকটি কর্মী নিজস্ব কাজের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য অর্জন করতে থাকবে।
ব্যবস্থাপনার মূলনীতিগুলো কি কি
ব্যবস্থাপনার মোট ১৪ টি মূলনীতি বা নীতিমালা রয়েছে। চলুন এক নজরে ব্যবস্থাপনার মূলনীতি বা নীতিমালা গুলো দেখে আসা যাক:
- কার্যবিভাগ নীতি,
- ক্ষমতা এবং দায়িত্ব বন্টন নীতি,
- নিয়মানুবর্তিতা বা শান্তিদান নিতী,
- আদর্শের ঐক্য,
- নির্দেশনার ঐক্য,
- নিজস্ব স্বার্থ ত্যাগ,
- পারিশ্রমিকের নীতি,
- কেন্দ্রীকরণ এবং বিকেন্দ্রিকরণের নীতি,
- সাম্যতার নীতি,
- জোড়া মই শিকল নীতি,
- শৃংখলার নীতি,
- উদ্যোগের নীতি,
- একতাই বল,
বর্তমানে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান যেহেতু বৃহদায়ন অর্থে ব্যবস্থাপনার উপনির্ভরশীল হচ্ছে সেহেতু ব্যবস্থাপনার মূলনীতিগুলো মেনে চলা এখানে অতীব জরুরী। একজন ব্যবস্থাপক তখনই তার কার্য সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে যখন সে ব্যবস্থাপনার মূলনীতিগুলো সহজে অনুধাবন করতে পারে। ব্যবস্থাপনার এই চৌদ্দটি মূলনীতি ছাড়াও আরো কিছু মূলনীতি রয়েছে। এগুলো হলো:
- সহযোগিতার নীতি,
- নমনীয়তার নীতি,
- ভারসাম্যের নীতি,
- সর্বজনীনতার নীতি,
- ব্যতিক্রমের নীতি।
যখন একটি প্রতিষ্ঠানে ১৪ টি মূলনীতির সাথে নিচের মূলনীতিগুলো সঠিকভাবে পর্যালোচনা এবং বিচার বিশ্লেষণ করা হয় তখনই একটি প্রতিষ্ঠান তাদের সকল কর্মকান্ড ইতিবাচক ফলাফল দেখাতে পারে।
আরো পড়ুন: অনলাইন ব্যাংকিং কাকে বলে? সুবিধা, অসুবিধা ও গুরুত্ব
ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর
ব্যবস্থাপনার ১৪টি মূলনীতি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ব্যবস্থাপক যেন তার দিকনির্দেশকের সাথে সঠিকভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে সেজন্য ব্যবস্থাপনার মূলনীতি প্রয়োজন। সর্বোপরি ব্যবস্থাপনাকে পরিকল্পনা দিয়ে শুরু করে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে মূলনীতিগুলো সর্বাধিক ভূমিকা পালন করে।
ব্যবস্থাপনার জনক কে?
ব্যবস্থাপনার জনক হলেন ফ্রেডরিক উইন্সলো টেইলর (ইংরেজি: Frederick Winslow Taylor. তিনি জন্মগ্রহণ করেন ২০ মার্চ, ১৮৫৬ সালে এবং মৃত্যুবরণ করেন ২১ মার্চ, ১৯১৫ সালে। তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শিল্প উন্নয়নের জন্য কাজ করে গিয়েছেন। এসব কারণেই তাকে ব্যবস্থাপনার জনক বলা হয়।
ব্যবস্থাপনা ও সংগঠনের তিনটি মূলনীতি কি কি?
ব্যবস্থাপনা ও সংগঠনের তিনটি মূলনীতি হলো পরিকল্পনা, সংগঠিত করা, নেতৃত্ব দেওয়া।
ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আমাদের মতামত
যেকোনো প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার জন্য এবং প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যবস্থাপনার ভূমিকা অপরিসীম। আজকের রাইটে গেলে আমরা ব্যবস্থাপনা কি? ব্যবস্থাপনা কত প্রকার ও কি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আর্টিকেলটি পড়ে আপনারাও উপকৃত হলে সেখানেই আমাদের সার্থকতা। ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন থেকে থাকলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন এবং এমন তথ্যবহুল আর্টিকেল পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।