বর্তমান পৃথিবীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদের জীবনযাত্রায় মান সহজ করে দিয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে বিস্তার পরিমাণে পার্থক্য রয়েছে।
বিজ্ঞানের প্রয়োগ উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি হচ্ছে আলাদা। অন্যদিকে প্রযুক্তির উদ্দেশ্য পদ্ধতি ও প্রয়োগের ক্ষেত্রেও পার্থক্য রয়েছে। মূলত এখান থেকেই আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরা হয়।
আমরা আমাদের আজকের আর্টিকেলে জানবো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে। আমরা অনেকেই হয়তো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে এক মনে করে, আপনি কি জানেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পার্থক্য গুলো কি কি। যদি না জেনে থাকেন তাহলে পুরো আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন।
আরো পড়ুন: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে বিজ্ঞান কি এবং প্রযুক্তি কি। আমরা যদি দুটোর আলাদা সংজ্ঞা সম্পর্কে জানতে পারি তবেই আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পার্থক্য গুলো সহজ ভাবে বুঝতে পারব।
১. বিজ্ঞান কি

বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন বিভিন্ন বিষয় কে পর্যবেক্ষণ করে সেটাকে ব্যাখ্যা করা। বিজ্ঞানকে সাধারণত বিশেষভাবে অর্জিত জ্ঞান বলে। পৃথিবীর মধ্যে অনেক কিছুই রয়েছে যেগুলোর কারণ খুঁজে বের করার জন্য বিজ্ঞান আমাদের সাহায্য করে।
মহাকাশ থেকে মহাবিশ্ব বা পৃথিবীর যেকোনো ঘটনাকে বিজ্ঞান দ্বারা আইডেন্টিফাই করা যায়। মূলত বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হলো প্রকৃতিকে জানা। পৃথিবীর প্রাকৃতিক জটিলতা কিভাবে কাজ করে তা ঠিকভাবে বোঝার জন্য বিজ্ঞান আমাদের সাহায্য করে।
বিজ্ঞান হলো অজানাকে জানা। পৃথিবীতে বহু বহু প্রাকৃতিক ঘটনা রয়েছে, যেগুলোর প্রকৃতিক কারণ বের করার অন্যতম মাধ্যম হলো বিজ্ঞান। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় – আকাশ কেন নীল এবং গ্রাভিটি কিভাবে কাজ করে? এই দুইটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আপনাকে বিজ্ঞানের সাহায্য নিতে হবে।
প্রযুক্তি এ দুটি প্রশ্নের উত্তর প্রদান করতে পারবে না। ঠিক এমনই ভাবে প্রকৃতির বিভিন্ন ঘটনাকে পর্যবেক্ষণ করে সঠিক ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর জন্য বিজ্ঞান আমাদের সাহায্য করে। আশা করি বিজ্ঞান কি সেটা সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছেন। এবার চলুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জেনে নেই।
আরো পড়ুন: ব্যবস্থাপনা কাকে বলে? ব্যবস্থাপনা কত প্রকার ও কি কি
২. প্রযুক্তি কি

বিজ্ঞানের জ্ঞানকে ব্যবহার করে মানুষের জীবনকে সহজ করে দেওয়ার জন্য প্রযুক্তি কাজ করে। প্রযুক্তি হলো এক ধরনের যন্ত্র যেগুলো বিজ্ঞানের মাধ্যমেই অর্জন করা হয়েছে। প্রযুক্তি আমাদের জীবনে সরাসরি অবদান রাখতে পারে। বিজ্ঞান ছাড়া প্রযুক্তি অসম্ভব।
বিজ্ঞানের ধারণার মাধ্যমে প্রযুক্তি তৈরি করা হয়। প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের ন্যায় ছোট ছোট টুল মানুষের জীবনকে সহজ করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় মোবাইল ফোন। যা বিজ্ঞানের চিন্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এই ছোট্ট একটি যন্ত্র মানুষের জীবনকে পরিবর্তন করে দিয়েছে।
ঠিক একই রকম ভাবে প্রযুক্তি আমাদের জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কৃষি ক্ষেত্র, স্বাস্থ্য ক্ষেত্র, শিক্ষা ক্ষেত্র, দৈনন্দিন জীবনে প্রতিদিন আমাদেরকে প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হতে হয়। আশা করি প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কে আপনি বুঝতে পেরেছেন।
আরো পড়ুন: মোবাইল ব্যাংকিং কি? মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা ও অসুবিধা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এক নয়। বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য একরকম এবং প্রযুক্তির উদ্দেশ্য আরেক রকম। বিজ্ঞানের কাজের পদ্ধতি ভিন্ন অন্যদিকে প্রযুক্তির কাজের পদ্ধতি ও ভিন্ন। মূলত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে উদ্দেশ্য, পদ্ধতি, ফলাফল সকল ক্ষেত্রেই পার্থক্য রয়েছে। নিচে আমরা মূল কিছু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য গুলো ধরলাম –
বিজ্ঞান | প্রযুক্তি |
বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হল জ্ঞান অর্জন করা এবং প্রকৃতির রহস্য উন্মোচন করা। | প্রযুক্তি সবসময় সমস্যার সমাধান করতে ও ব্যবহারিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। |
বিজ্ঞান সবসময় পরীক্ষা নিরীক্ষা ও তথ্য প্রণয়ণ ও প্রমান সংগ্রহ করে। | প্রযুক্তির মাধ্যমে জ্ঞানের প্রয়োগের মাধ্যমে পণ্য ও প্রক্রিয়া উন্নয়ন করা হয়। |
বিজ্ঞানকে তাত্ত্বিক জ্ঞান বলা হয়। জ্ঞানের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের জিনিস কে আবিষ্কার করা হয়। যেমন গ্রাভিটির সূত্র এটি একটি তাত্ত্বিক জ্ঞান। | দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারযোগ্য উপকরণ তৈরি করতে পারে যেমন গাড়ি, মোবাইল ফোন, টেলিফোন ইত্যাদি। |
বিজ্ঞান সব সময় কি এবং কেন এর উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত থাকে। অর্থাৎ বিজ্ঞান কে সব সময় প্রশ্ন করতে উত্তর খুজতে ব্যবহার করা হয়। | বিজ্ঞান যেমন কি এবং কেন খুঁজতে ব্যস্ত। অন্যদিকে প্রযুক্তি কিভাবে ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে কাজ করে। |
বিজ্ঞান দীর্ঘমেয়াদি জ্ঞান সংগ্রহের জন্য কাজ করে থাকে। | বিজ্ঞান তাত্ত্বিক জ্ঞান হলেও প্রযুক্তি ব্যবহারিক এবং প্রয়োগমুখী। |
বিজ্ঞান সবসময় প্রকৃতির নিয়মের উপর নির্ভরশীল। | প্রযুক্তি সবসময় বিজ্ঞানের জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। |
বিজ্ঞানের মাধ্যমে নতুন নতুন তথ্য ও ধারণা সৃষ্টি করা সম্ভব। | প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা যায়। |
বিশ্বের উন্নয়ন বিকাশে বিজ্ঞানের গুরুত্ব অনেক বেশি। এছাড়াও মানুষের জীবনকে সহজ করে তুলতে বিজ্ঞান নির্ভরযোগ্য জ্ঞান। | প্রযুক্তিতে থাকে বিদ্যমান জ্ঞান থেকে নতুন উদ্ভাবন করা সম্ভব। প্রযুক্তি মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রে উপকারী। নতুন নতুন প্রযুক্তি বিজ্ঞানের চিন্তার মাধ্যমে সহজে তৈরি করা সম্ভব। |
মূলত এই পার্থক্যগুলোই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে আলাদা করেছে। বিজ্ঞান ছাড়া কখনোই প্রযুক্তি কল্পনা করাও সম্ভব নয়। বিজ্ঞানের জ্ঞানের মাধ্যমে প্রযুক্তি তৈরি করা সম্ভব। আশা করি আপনারা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য গুলো বুঝতে পেরেছেন।
আরো পড়ুন
- ছাত্র জীবনে টাকা আয় করার উপায়
- মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করার উপায়
- বিকেন্দ্রীকরণ কি? বিকেন্দ্রীকরণ এর সুবিধা অসুবিধা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর
বিজ্ঞান কিভাবে প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করে?
বিজ্ঞান মূলত পর্যবেক্ষণ পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে এবং ঘটনার ব্যাখ্যার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কি?
বিজ্ঞান হলো প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান যা পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয় অন্যদিকে প্রযুক্তি আমাদের জীবনের বাস্তব সমস্যা সমাধানে কাজ করে থাকে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে আমাদের মতামত
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উভয় মিলে আমাদের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে। বিজ্ঞানের কি এবং কেন এর উত্তর খুঁজতে আমরা অনেক ধরনের প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে সম্ভব হয়েছি। প্রযুক্তি দিনদিন যত বেশি আপগ্রেড হচ্ছে আমাদের জীবনযাত্রার মান তত বেশি উন্নতি হচ্ছে। অর্থাৎ এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি বিজ্ঞানের উন্নতি হলো প্রযুক্তির উন্নতি। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।