বর্তমানে ঘরে বসে আয় করার অন্যতম একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ড্রপশিপিং ব্যবসা। যদি আপনি কোনো ইনভেস্ট ছাড়া একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে চান তাহলে ড্রপশিপিং ব্যবসা করতে পারেন। ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনাকে কোনো ইনভেস্ট করতে হবে না।
যদি আপনি ড্রপশপিং ব্যবসা থেকে আয় করতে চান বা ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে আপনাকে সব কিছু বিস্তারিত ভাবে জেনে নিতে হবে। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো ড্রপশিপিং কি, ড্রপশিপিং কিভাবে করতে হবে বিস্তারিত। তাই আপনি যদি এ ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে থাকেন তবে আর্টিকেল টি শেষ পর্যন্ত পড়ার চেষ্টা করুন।
ড্রপশিপিং কি

ড্রপশিপিং মূলত একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মডেল। যেখানে আপনি পন্য বিক্রি করতে পারেন কোনো ধরণের পন্য স্টোর করা ছাড়াই। ওয়েবসাইট তৈরি করে সেখানে বিভিন্ন পন্যের ছবি দাম সহ উল্লখ্য করে দিবেন। ক্রেতা আকৃষ্ট হয়ে আপনার পন্য টি অর্ডার করার পর আপনি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পন্য নিয়ে আপনার ক্রেতার কাছে পন্য টি ডেলিভার করে দিবেন।
এখানে আপনি মধ্যম ব্যাক্তি হিসেবে কাজ করবেন ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে। এখান থেকে দুইভাবে লাভ করতে পারবেন। প্রথমত আপনি পন্যের মধ্যে দেয়া দাম থেকে লাভ্যাংশ পাবেন। অন্যদিকে তৃতীয় পক্ষের এফিলিয়েট করে দিয়ে আয় করতে পারবেন।
আরো পড়ুন: অনলাইন ব্যাংকিং কাকে বলে? সুবিধা, অসুবিধা ও গুরুত্ব
ড্রপশিপিং ব্যবসা কিভাবে কাজ করে
আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে ড্রপশিপিং কিভাবে কাজ করে। আসলে ড্রপশিপিং কয়েকটি ধাপে কাজ করে। সাধারণত ড্রপশিপিং ব্যবসা যেভাবে কাজ করে:
১ম ধাপ – কাস্টমার অর্ডার গ্রহণ
প্রথমেই আপনার একজন ক্রেতা আপনার ওয়েবসাইট অথবা সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যম থেকে আপনার দেয়া পন্যের তালিকার মধ্য দিয়ে যে কোনো একটি পন্য অর্ডার করবে।
২য় ধাপ – অর্ডার গ্রহণ করে সাপলায়ার কে দেয়া
যখন অর্ডার দেয়া হয়ে যাবে তখন ডেলিভারি চার্জ রেখে দিতে পারেন আবার নাও দিতে পারেন নির্ভর করে আপনার পন্য সাপলাইকারির উপরে। আপনাকে পন্য যিনি সাপলাই দিবেন উনি যদি ক্যাশ অন ডেলিভারিতে রাজি হয়ে থাকেন তবে কাস্টমার থেকে পেমেন্ট গ্রহণ করতে হবে না। যাইহোক, কাস্টমার অর্ডার দেয়ার পর পন্য টি সাপলেয়ার এর কাছে অর্ডার দিয়ে দিন।
৩য় ধাপ – সাপলায়ার ডেলিভারি করবে
সাপ্লায়ার এর কাছে যখন অর্ডার তথ্য পাঠিয়ে দিবেন অর্ডার অনুযায়ী তিনি ডিলিভারি করে দিবেন।
৪র্থ ধাপ – আয়
দুই ভাবে আয় করা যায় প্রথমত কাস্টমার কে দেয়া দামের লাভ্যাংস ও সাপ্লেয়ার এর এফিলিয়েট মার্কেটিং করে।
আরো পড়ুন: কেন্দ্রীকরণ কি? কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ পার্থক্য
কিভাবে ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করবেন
ড্রপশিপিং একটি লাভজনক ব্যবসা। যদি আপনি ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে বিস্তারিত ভাবে জেনে নিতে হবে। তবে আপনি যদি না জেনে থাকেন কিভাবে ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করবেন তাহলে নিচে দেখে নিন –
১. নিস সিলেক্ট করুন

ড্রপশিপিং ব্যবসা শুরু করার পূর্বে প্রধান একটি দিক হলো প্রথমে আপনাকে বিষয় সিলেক্ট করতে হবে। মূলত আপনি কোন বিষয় নিয়ে ব্যবসা করতে চান এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিষয় সিলেক্ট করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন সেটাতে আপনার আগ্রহ থাকে। অন্যদিকে কাস্টমার চাহিদা যেন থাকে।
কাস্টমার চাহিদা আছে এমন পন্য নিয়ে কাজ করলে দ্রুত সময়ে লাভ করা যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে আপনার পছন্দ করা বিষয়ের উপর আগে থেকেই যেন বড় কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকে। আপনি চাইলে গুগল ট্রেন্ডস, কিওয়ার্ড টুলস এর মাধ্যমে আপনার নিস সিলেক্ট করে নিতে পারেন।
আরো পড়ুন: ব্যবস্থাপনা কাকে বলে? ব্যবস্থাপনা কত প্রকার ও কি কি
২. সাপ্লায়ার খুজুন
আপনি যেহেতু কোনো পন্য নিজে স্টক করবেন না তৃতীয় মাধ্যমে পন্য ডেলিভারি করবেন তাই আপনাকে সাপ্লায়ার খুজে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অনেক অনলাইন ই – কমার্স ওয়েবসাইট সাপ্লায়ের কাজ করে। তবে যদি অনলাইনে না করতে চান কোনো দোকানের সাথে চুক্তি করে নিতে পারেন।
৩. অনলাইনে স্টোর সাজিয়ে নিন

এ পর্যায় আপনাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলো করতে হবে। অনলাইনে একটি ওয়েবসাইট খুলতে হবে। আপনার স্টোরের নাম অনুযায়ী একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে নিন।
সেখানে সব গুলো পন্য বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরুন। ওয়েবসাইটের ডিজাইন সিম্পল ও সুন্দর রাখার চেষ্টা করুন এতে কাস্টমার বেশি আকৃষ্ট হবে। বিভিন্ন ধরনের প্লাগিন ইন্সটল করে ওয়েবসাইটে পেমেন্ট সিস্টেম যুক্ত করে দিন।
৪. মার্কেটিং করুন

আপনার অনলাইন স্টোর খোলা হয়ে গেলে এবার ভালোভাবে মার্কেটিং করতে হবে। অনলাইন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলোতে পেজ বা গ্রুপ তৈরি করে নিতে হবে। মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আপনি কয়েক ভাবে মার্কেটিং করতে পারেন –
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং: সোশ্যাল মিডিয়া যেমন – ফেসবুক, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদির মাধ্যমে আপনার স্টোরের মার্কেটিং করুন।
- গুগল এডস: গুগল এডস এর মাধ্যমে মার্কেটিং করতে পারলে সরাসরি আপনার ওয়েবসাইট ক্রেতার কাছে সবার আগে প্রদর্শন করাবে। তবে এটা অনেক ব্যায়বহুল একটি ব্যাপার।
- সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেসন: এসইও এর মাধ্যমে কোনো প্রকার টাকা খরচ ছাড়াই মার্কেটিং করতে পারবেন। তবে আপনাকে ভালো ভাবে দক্ষ হতে হবে।
- কোলাব্রেসন মার্কেটিং: আপনি যদি ইনভেস্ট করে মার্কেটিং করতে চান তবে বিভিন্ন ইনফ্লুয়েন্সর বা সেলেব্রেটি ব্যাক্তিদের মাধ্যমে আপনার স্টোরের মার্কেটিং করতে পারেন।
৫. কাস্টমার সাপোর্ট

যে কোনো অনলাইন স্টোরের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো কাস্টমার সার্ভিস ও সাপোর্ট। আপনার লক্ষ্য রাখতে হবে পণ্যের কোয়ালিটির উপরে। আপনার সাপ্লায়ার সঠিক পন্য টি কাস্টমার কে দিচ্ছে কি না খেয়াল রাখা জরুরী।
বিভিন্ন বিষয়ে কাস্টমার এর সমস্যা ও অভিযোগ থাকতে পারে। বিভিন্ন টুলস এর মাধ্যমে কাস্টমার সাপোর্ট নিশ্চিত করতে পারবেন। সবসময় কাস্টমারের সমস্যা সমাধান এর চেষ্টা করতে হবে।
আরো পড়ুন: সরকারি ভাবে ইউরোপ যাওয়ার উপায়
ড্রপশিপিং ব্যবসার সুবিধা
উপরের বিস্তারিত জানার পরে আপনার প্রশ্ন আসতে পারে, ড্রপশিপিং ব্যবসার সুবিধা আসলে কি। চলুন জেনে নেই ড্রপশিপিং ব্যবসার সুবিধা গুলো সম্পর্কে:
- কম ইনভেস্টে ব্যবসা শুরু করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে মার্কেটিং এ দক্ষ হলে কোনো ধরণের ইনভেস্ট এর প্রয়োজন পরে না।
- কোনো পন্য স্টোক করার দরকার পরে না তাই যে কোনো পন্য নিয়ে কাজ করা যায়। এক সাথে অনেক ধরণের পন্য বিক্রি করা যায়।
- ড্রপশিপিং ব্যবসা যে কোনো স্থানে করা যায়। আপনি ধরুন – বাংলাদেশে থাকেন আপনি চাইলে আমেরিকা তে ড্রপশিপিং করতে পারবেন।
- লস হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই
আরো পড়ুন: মোবাইল ব্যাংকিং কি? মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা ও অসুবিধা
ড্রপশিপিং ব্যবসার অসুবিধা
ড্রপশিপিং ব্যবসার যেমন সুবিধার দিক রয়েছে তেমন কয়েকটি অসুবিধার দিক রয়েছে। চলুন জেনে নেই অসুবিধার দিক গুলো সম্পর্কে –
- লাভের পরিমান কম থাকে। সীমিত লাভের মধ্যে পন্য বিক্রি করতে হয়।
- অনেক সময় সাপ্ল্যায়ার নকল পন্য দিয়ে থাকে যা আপনার স্টোরের মান নষ্ট করে দেয়।
- অনেক বেশি অর্ডার হলে সবাইকে সঠিক ভাবে ডেলিভারি দেয়া কঠিন হয়।
- কাস্টমার সার্ভিস সঠিক ভাবে দেয়া টা অনেক কঠিন।
আরো পড়ুন: বিকেন্দ্রীকরণ কি? বিকেন্দ্রীকরণ এর সুবিধা অসুবিধা
ড্রপশিপিং সম্পর্কে আমাদের মতামত
আজকের আর্টিকেলে আমরা ড্রপশিপিং কি? ড্রপশিপিং ব্যবসা থেকে আয় করে কিভাবে বিস্তারিত ভাবে জানানোর চেষ্টা করলাম। আপনার যদি ঘরে বসে ব্যবসা করে আয় করার ইচ্ছা থাকে তবে ড্রপশিপিং করে আয় করতে পারেন। অনেকেই শুধু মাত্র একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করে সেখানে ড্রপশিপিং করে আয় করতে পারছে। তবে আপনি শুরু করার পূর্বে অবশ্যই বিস্তারিত ভাবে দক্ষ হয়ে শুরু করবেন। সবচেয়ে বড় একটি ব্যাপার হলো ধৈর্য। অনলাইনে যে কোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরে কাজ করে যেতে হবে। যদি আপনার ধৈর্য কম থাকে তবে এ ধরনের ব্যবসা না করা ভালো। আর্টিকেল টি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।