বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের বিদেশ যাওয়ার জন্য কঠিন পছন্দ হলো ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। ইউরোপের দেশগুলো মানুষের প্রথম পছন্দ হওয়ার কারণ হলো শেনজেনভুক্ত একটি দেশের ভিসা পেলে ২৭ টি দেশ কোনরকম আলাদা ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করার সুবিধা রয়েছে। তাছাড়া ইউরোপের প্রায় সবগুলো দেশের জীবন যাত্রার মান আমাদের দেশ থেকে বেশ উন্নত।
ইউরোপের অনেকগুলো দেশ থেকে খুব সহজেই এখন ভিসা পাওয়া সম্ভব। দেশগুলো হলো: ফ্রান্স, পর্তুগাল, মাল্টা, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, হাঙ্গেরি, লিথুনিয়া, লাটভিয়া ইত্যাদি অন্যতম। আবার ইউরোপের বিভিন্ন উন্নত দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার স্টুডেন্ট ভিসা প্রাপ্তি বেশ সহজ।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে শিক্ষার্থী ইউরোপের এসব উন্নত দেশে পাড়ি জমাচ্ছে ভবিষ্যৎ উন্নত করার জন্য। আজকের আর্টিকেলে আমরা কম খরচে ইউরোপের কোন দেশে যাওয়া যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আরো পড়ুন: ব্যবস্থাপনা কাকে বলে? ব্যবস্থাপনা কত প্রকার ও কি কি
ইউরোপ যেতে কত টাকা লাগে
ইউরোপ যেতে কত টাকা লাগে তা নির্ভর করে কোন দেশে যেতে চাচ্ছেন, ভিসা ক্যাটাগরি, ভিসার মেয়াদ, এন্ট্রির ধরন এর উপর। বাংলাদেশ থেকে যারা বিভিন্ন ভিসায় পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে যেতে চান তাদের জন্য খরচ কিছুটা বেশি হবে। অপরদিকে যারা পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে যেতে চাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে খরচ তুলনামূলকভাবে বেশ কম।
মধ্য ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার ক্ষেত্রে যদি নিজে নিজে ভিসা প্রসেসিং করেন তাহলে খরচ তুলনামূলক কম হবে এবং এমনিতেও পূর্ব এবং পশ্চিম ইউরোপে তুলনায় মধ্য ইউরোপের দেশে যেতে খরচ তুলনামূলক কম হয়। চলুন এক নজরে একটি ছকের মাধ্যমে দেখে আসি ইউরোপে কোন দেশে যেতে কত টাকা খরচ হয়।
ভৌগলিক অবস্থান | টুরিস্ট ভিসা খরচ | স্টুডেন্ট ভিসা খরচ | ওয়ার্ক পারমিট ভিসা খরচ |
পূর্ব ইউরোপ | ৩-৫ লক্ষ টাকা | ৪-৫ লক্ষ টাকা | ৫-১০ লক্ষ টাকা |
মধ্য ইউরোপ | ৪-৬ লক্ষ টাকা | ৫-৭ লক্ষ টাকা | ১০-১২ লক্ষ টাকা |
পশ্চিম ইউরোপ | ৫-১৫ লক্ষ টাকা | ৫-১০ লক্ষ টাকা | ১২-১৫ লক্ষ টাকা। |
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসা ক্যাটাগরি রয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য সরকার নানা সময় নানা ধরনের সার্কুলার প্রদান করে থাকে। তবে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য বিশেষ করে সবাই স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক ভিসা, ভিজিট ভিসা ব্যবহার করে থাকে। তবে ইউরোপে কোন দেশে কখন যাওয়ার জন্য কত টাকা খরচ হতে পারে তার নিশ্চিতভাবে জানার জন্য ইউরোপ প্রবাসী কারো কাছ থেকে খবর নিলে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
আরো পড়ুন: সরকারি ভাবে ইউরোপ যাওয়ার উপায়
ইউরোপের কোন দেশের ভিসা পাওয়া সহজ

যারা ইউরোপ যেতে চান তাদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সময়ের মধ্যে ভিসা প্রাপ্তি। বাংলাদেশ থেকে যারা ইউরোপ যেতে চান তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সেনজেন ভিসা প্রাপ্তি, যা তুলনামূলক ভাবে বেশ কঠিন। তবে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশ রয়েছে যেখান থেকে খুব সহজে ভিসা পাওয়া যায়। দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো: হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, লিথুনিয়া, লাটভিয়া, গ্রিস, ফিনল্যান্ড, পর্তুগাল, আয়ারল্যান্ড।
পশ্চিম ইউরোপের উন্নত দেশগুলোতে যারা যেতে চান তাদের কাছে ভিসা প্রাপ্তি কিছুটা কঠিন হলেও দূতাবাসের সকল শর্ত মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী কাজ করলে খুব দ্রুত ভিসা পাবেন বলে আশা করছি। ইউরোপের কয়েকটি দেশ যেমন: পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, এস্তোনিয়া প্রভৃতি তে কম খরচে পৌঁছানো সম্ভব। এসব দেশগুলোতে পাড়ি জমানোর জন্য খরচ এবং সময় দুটোই কম লাগে।
আরো পড়ুন: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার
পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে যেতে কত টাকা লাগে
মধ্য এবং পশ্চিম ইউরোপের তুলনায় পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে যেতে খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম হয়। কারণ পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো তুলনামূলকভাবে নিম্ন আয়ের দেশ। পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশ হলো:
- রাশিয়া,
- ইউক্রেন,
- মলদোভা,
- বেলারুশ,
- জর্জিয়া,
- আর্মেনিয়া,
- আজারবাইজান,
- তুরস্ক,
- বসনিয়া
- হার্জেগোভিনা,
- বুলগেরিয়া,
- ক্রতার গুয়ানা,
- ক্রতারকের রিপাবলিক,
- ক্রোয়েশিয়া,
- হাঙ্গেরি,
- পোল্যান্ড,
- রোমানিয়া।
পূর্ব ইউরোপের এই দেশগুলোতে যেতে খরচ হবে সর্বনিম্ন ৭ লাখ টাকা থেকে ৯ লাখ টাকার মত। তবে সময় এবং পরিস্থিতি ছাড়াও দেশের রাজনীতির উপর ভিত্তি করে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে যেতে অনেক সময় ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা ও খরচ হতে পারে। ভিসার আবেদন করার সময় এই তথ্যগুলো খুব পরিষ্কার ভাবে পাওয়া সম্ভব।
আরো পড়ুন: ছাত্র জীবনে টাকা আয় করার উপায়
পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে যেতে কত টাকা লাগে
পূর্ব এবং মধ্য ইউরোপের দেশগুলোর তুলনায় পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে যেতে তুলনামূলক খরচ অনেক বেশি হয়। কারণ পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো এখন সবচেয়ে বেশি উন্নত এবং জীবনযাত্রার মান খুবই ভালো। বর্তমানে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোকে উচ্চ আয়ের দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো:
- আইসল্যান্ড,
- অ্যান্ডোরা,
- আলবেনিয়া,
- সাইপ্রাস,
- ডেনমার্ক,
- ইস্টোনিয়া,
- ফ্রান্স,
- জার্মানি,
- গ্রীস,
- ইতালি,
- লাতভিয়া,
- লিথুয়ানিয়া,
- লুক্সেমবার্গ,
- মালটা,
- মন্টিনিগ্রো,
- হল্যান্ড,
- নরওয়ে,
- পর্তুগাল,
- সান মারিনো।
পশ্চিম ইউরোপের এই দেশগুলোতে যারা যেতে চান তাদের কমপক্ষে খরচ হতে পারে ১২ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। তবে যারা স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে চান তাদের ক্ষেত্রে খরচ কম বা বেশি হতে পারে, মেধার উপর ভিত্তি করে। স্কলারশিপ এর মাধ্যমে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে যেতে চাইলে খরচ বেশ কম পড়ে। কিন্তু স্কলারশিপ ছাড়া পশ্চিম ইউরোপে দেশগুলো থেকে পড়াশোনা শেষ করা বাংলাদেশের মতো অল্প আয়ের দেশের পরিবারের পক্ষে বেশ কঠিন কাজ।
আরো পড়ুন: মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করার উপায়
মধ্য ইউরোপের দেশগুলোতে যেতে কত টাকা লাগে
মধ্য ইউরোপের দেশগুলোতে যেতে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর তুলনাই বেশি এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো তুলনায় কম খরচ হয়ে থাকে। এখানে টাকার পরিমান মধ্যম এবং জীবনযাত্রার মান ভালো বলে বর্তমানে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে মানুষ মধ্য ইউরোপের দেশগুলোতে পাড়ি জমাচ্ছে। মধ্য ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো:
- অস্ট্রিয়া,
- বেলজিয়াম,
- চেক প্রজাতন্ত্র,
- ডেনমার্ক,
- ফিনল্যান্ড,
- আয়ারল্যান্ড,
- নেদারল্যান্ডস, এবং
- সুইজারল্যান্ড।
মধ্য ইউরোপের দেশগুলোতে কাজের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি এবং বাংলাদেশ থেকে স্বল্প শিক্ষিত মানুষ সেখানে গিয়ে বেশ ভালো মানের কাজ করছে এবং উন্নত মানের জীবনযাপন করছে। মধ্য ইউরোপের দেশগুলোতে যেতে খরচ হতে পারে সর্বনিম্ন ৮ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
আরো পড়ুন: মোবাইল ব্যাংকিং কি? মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা ও অসুবিধা
IELTS ছাড়া ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায়
ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে যাওয়ার জন্য IELTS এর প্রয়োজন হয়। তবে কিছু কিছু দেশ রয়েছে যেখানে যাওয়ার জন্য IELTS প্রয়োজন হয় না। যদি কোন ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ইউরোপের কোন দেশে যেতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে কোনোভাবেই IELTS এর প্রয়োজন হবে না। কিন্তু কেউ যদি স্টুডেন্ট ভিসায় ইউরোপের যে কোন দেশে যেতে চাই সে ক্ষেত্রে অবশ্যই IELTS প্রয়োজন হবে।
নিচে আমরা কয়েকটি দেশের নাম তুলে ধরছি যেখানে যাওয়ার জন্য আপনাকে IELTS এ অংশগ্রহণ করতে হবে না।
- জার্মানি
- নেদারল্যান্ডস
- নরওয়ে
- পোল্যান্ড
- লাটভিয়া
- এস্তোনিয়া
- হাঙ্গেরি
- ফিনল্যান্ড
- রাশিয়া
- ইউক্রেন।
উপরোক্ত দেশগুলোতে পড়াশোনা করার জন্য IELTS ছাড়াও অন্যান্য কিছু পরীক্ষা রয়েছে যেমন: TOEFL বা Cambridge English. তবে যারা ইংলিশ মিডিয়াম ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে উঠে এসেছে তাদের ভিসার জন্য আবেদন করার সময় IELTS এর প্রয়োজন হয় না। তবে এক্ষেত্রে IELTS এর প্রয়োজন না হলেও যে দেশে যাচ্ছেন সে দেশের স্থানীয় ভাষা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা রাখা জরুরী।
আরো পড়ুন: অনলাইন ব্যাংকিং কাকে বলে? সুবিধা, অসুবিধা ও গুরুত্ব
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায়

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে পড়াশোনা, স্থায়ী বসবাস বা কাজের জন্য। তবে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য আলাদা আলাদা ভিসা প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। চলুন এক নজরে দেখে আসি বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায়:
- জার্মানি
- ফ্রান্স
- ইতালি
- স্পেন
- নেদারল্যান্ডস
- বেলজিয়াম
- সুইডেন
- ডেনমার্ক
- নরওয়ে
- ফিনল্যান্ড
- সুইজারল্যান্ড
- অস্ট্রিয়া
- গ্রিস
- পর্তুগাল
- হাঙ্গেরি
- পোল্যান্ড
- চেক প্রজাতন্ত্র
- লুক্সেমবার্গ
- আইসল্যান্ড
- লাটভিয়া
- লিথুয়ানিয়া
- এস্তোনিয়া
- স্লোভেনিয়া
- স্লোভাকিয়া
- মাল্টা
- লিচেনস্টেইন।
আরো পড়ুন:
- ড্রপশিপিং কি? ড্রপশিপিং ব্যবসা থেকে আয় করে কিভাবে
- বিকেন্দ্রীকরণ কি? বিকেন্দ্রীকরণ এর সুবিধা অসুবিধা
- কেন্দ্রীকরণ কি? কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ পার্থক্য
ইউরোপের দেশ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর
ইউরোপের কোন দেশ কাজের জন্য ভালো?
ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মাধ্যমে আবেদন করে জার্মানি, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, এবং যুক্তরাজ্য তে কাজের জন্য বেশ ভালো ফ্যাসিলিটি পাওয়া যায়।
ইউরোপে সর্বনিম্ন বেতন কত?
ইউরোপের কয়েকটি দেশ যেমন: ফ্রান্সে মাসিক ন্যূনতম মজুরি ১৫৫৫ ইউরো, জার্মানিতে ১৬১৪ ইউরো, বেলজিয়াম ১৬২৬ ইউরো, নেদারল্যান্ডসে ১৬৮৫ ইউরো, আয়ারল্যান্ডে ১৭২৪ ইউরো।
ইউরোপের সবচেয়ে সহজ ওয়ার্ক পারমিট কোন দেশে পাওয়া যায়?
ইউরোপের সবচেয়ে সহজ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড এ পাওয়া যায়।
ইউরোপের দেশ সম্পর্কে আমাদের মতামত
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেহেতু বিভিন্ন ধরনের ভিসার মাধ্যমে যাওয়া সম্ভব তাই এটি সম্পূর্ণভাবে নির্ধারণ করে আপনার বাজেট এবং আপনার ইচ্ছার উপর। আজকে আর্টিকেলে আমরা কম খরচে ইউরোপের কোন দেশে যাওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আর্টিকেলটি যদি তথ্যবহুল মনে হয় অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন এবং এরকম তথ্যবহুল আর্টিকেল পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।