প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আসসালামু আলাইকুম। আপনারা যারা পারিবারিক বাজেট কাকে বলে? পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাদের জন্য সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের আর্টিকেল।
বর্তমান সময়ের অধিকাংশ পরিবারের অবস্থা হল আয় কম ব্যয় বেশি। এমন অবস্থায় প্রতি মাসে পারিবারিক বাজেট তৈরি করা এখন তো জরুরী হয়ে পড়েছে বেশিরভাগ পরিবারের জন্য। অনেকেই পারিবারিক বাজেট তৈরি করতে চাইলে ও সুস্পষ্ট ধারণার অভাবে পারিবারিক বাজেট তৈরি করতে পারেন না।
আমাদের আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়লে আপনি নিজ পরিবারের পারিবারিক বাজেট তৈরি করার পাশাপাশি অন্যান্য পরিবার কেউ সাহায্য করতে পারবেন বাজেট তৈরি করার জন্য। তাহলে চলুন পারিবারিক বাজেট কাকে বলে এবং পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
পারিবারিক বাজেট কাকে বলে

পারিবারিক বাজেট বলতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিবারের আয় ও ব্যয়ের একটি নির্দিষ্ট হিসাব কে বুঝিয়ে থাকে। পারিবারিক বাজেট হলো এমন একটি রোড ম্যাপ যেখানে দেখানো হয়ে থাকে এক মাসে আপনার কত টাকা ইনকাম হচ্ছে, এবং কোথায় কত টাকা আপনার খরচ হচ্ছে এবং আপনি কত টাকা জমাতে পারছেন। আরো সহজ ভাবে বলতে গেলে, পারিবারিক বাজেট বলতে একটি পরিবারের আয় অনুযায়ী পরিবারের সবগুলো সদস্যের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরি করা।
যখন একটি পরিবারের পারিবারিক বাজেট তৈরি করা হয় তখন সে পরিবারের আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। সর্বোপরি পারিবারিক বাজেটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, একটি পরিবারের নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য এবং পরিবারের আর্থিক টানাপোড়েনের সময় এই পারিবারিক বাজেট প্রত্যেকটি পরিবারের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাহলে এবার চলুন ধীরে ধীরে পারিবারিক বাজেট কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
আরো পড়ুন: ব্যবস্থাপনা কাকে বলে? ব্যবস্থাপনা কত প্রকার ও কি কি
পারিবারিক বাজেট কেন গুরুত্বপূর্ণ

পারিবারিক বাজেট হলো একটি পরিবারের আর্থিক পরিকল্পনা যা আই এবং ব্যয়ের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। পারিবারিক বাজেট যে কোন পরিবারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সরঞ্জাম যা পরিবারকে অর্থের নিয়ন্ত্রণ রাখতে এবং আর্থিক লক্ষ্য অর্জন করতে সাহায্য করে। একটি পরিবারের জন্য বিভিন্ন কারণে পারিবারিক বাজেট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। কারণগুলো হল:
১) আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে
পারিবারিক বাজেট পরিবারকে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমাতে এবং অর্থ সঞ্চয় করতে সাহায্য করে। এটি আকস্মিক খরচের জন্য একটি নিরাপত্তা জাল হিসাবে কাজ করে। যখন একটি পরিবার পারিবারিক বাজেটের মাধ্যমে সম্পূর্ণ মাস পরিচালিত হয় তখন তাদের হাতে মাসে শেষে কিছু অর্থ সঞ্চিত থাকে। এই অর্থ তারা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে থাকে। ভবিষ্যতে যখন কোন আকর্ষিক দুর্ঘটনা ঘটে বা আকস্মিক টাকা খরচ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় তখন এই টাকা থেকে খরচ করলে পরিবারের আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে, যা প্রত্যেকটি পরিবারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য পারিবারিক বাজেট দুঃসময়ে ম্যাজিকের মত কাজ করে।
আরো পড়ুন: অনলাইন ব্যাংকিং কাকে বলে? সুবিধা, অসুবিধা ও গুরুত্ব
২) লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করে
একটি বাজেট পরিবারকে তাদের আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে এবং তাদের অর্থকে সেই লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। এটি হতে পারে একটি বাড়ি কেনা, একটি গাড়ি কেনা, বা যেকোনো বড় কাজের জন্য সঞ্চয় করা। আর্থিক দিক বিবেচনা করে প্রত্যেকটি পরিবারের কিছু লক্ষ্য বা স্বপ্ন থাকে। কিন্তু এই স্বপ্ন তখনই বাস্তবায়ন হয় যখন মানুষ সেই স্বপ্নের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থ সঞ্চয় করতে পারে। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের লক্ষ্য যদি হয় মিডিয়াম রেঞ্জের একটি গাড়ি ক্রয় করা, তাহলে তার জন্য পারিবারিক বাজেট আগে থেকেই তৈরি করে অন্তত ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা সঞ্চয় করার প্রয়োজন হয়। এভাবেই প্রতিটি পরিবারের লক্ষ্য অর্জনের সাহায্য করে পারিবারিক বাজেট।
৩) অর্থের মূল্য বুঝতে সাহায্য করে
পরিবারের যা আয় হয় তাই যদি খরচ করে ফেলা হয় তাহলে পরিবারের সদস্যরা অর্থের মূল্য বুঝতে পারে না। কিন্তু পরিবারের যা আয় হচ্ছে তার একটি নির্দিষ্ট অংশ পরিবারের জন্য খরচ করে বাকিটা অংশ তুলে রাখলে পরিবারের সদস্যরা অর্থের মূল্য বুঝতে পারে এবং তারা খরচের প্রতি হিসেবি হয়। বিশেষ করে পরিবারের সন্তানেরা অর্থের মূল্য বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারে এ পদ্ধতি অবলম্বন করলে। এটি তাদের অর্থের মূল্য বুঝতে এবং ভবিষ্যতের জন্য দায়িত্বশীল আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। তাই পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যকে অর্থের মূল্য বোঝানোর জন্য প্রথম থেকেই পারিবারিক বাজেট তৈরি করুন এবং সে অনুযায়ী খরচ করার চেষ্টা করুন।
আরো পড়ুন: সরকারি ভাবে ইউরোপ যাওয়ার উপায়
৪) আর্থিক চাপ কমাতে সাহায্য করে
একটি পারিবারিক বাজেট পরিবারকে আর্থিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি তাদেরকে তাদের আর্থিক পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ভবিষ্যতের জন্য আরও আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করে। পরিবারে আর্থিক বাজেটের মাধ্যমে যখন কিছু টাকা সঞ্চিত থাকে তখন তা পরিবারের জন্য সাপোর্টের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। এতে করে পরিবারের আর্থিক চাপ বেশ কিছুটা কমে আসে এবং সেই সঞ্চিত অর্থ পরিবারের যে কোন একটি ভালো কাজে বা যেখানে সামর্থক তুলনায় বেশি টাকা খরচ হচ্ছে সেখানে ব্যয় করা যেতে পারে। সর্বোপরি পারিবারিক বাজেট যে কোন পরিবারের জন্য আর্থিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
৫) পরিবারের মধ্যস্থকার মনোমালিন্য দূর করে
একটা পরিবারে যখন আর্থিক টানাপোড়েন চলতে থাকে তখন সে পরিবারের মধ্যে অনেক সময় অকারণে ঝগড়াঝাটি এবং মনোমালিন্য দেখা দিতে পারে। কোন কোন সময় এই সমস্ত ছোট খাটো ঘটনা বড় কোন খারাপ ঘটনা জন্ম দিতে পারে। তাই যখন পরিবারের মধ্যে আর্থিক সমস্যার খুব বেশি প্রবণতা থাকে না তখন সে পরিবারের মধ্যে মনোমালিন্য এবং ঝগড়াঝাঁটির পরিমাণ কমে যায়। সর্বোপরি একটা পরিবারের সুখ শান্তি বজায় রাখার জন্য এবং পরিবারের মধ্যস্থকার মনোমালিন্য দূর করার জন্য পারিবারিক বাজেট গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুন: বিকেন্দ্রীকরণ কি? বিকেন্দ্রীকরণ এর সুবিধা অসুবিধা
পরিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম

একটি পরিবারকে সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং পরিবারকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পারিবারিক বাজেট এর কোন বিকল্প নেই। কারণ যখন একটি পরিবারে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয় তখন পরিবারের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয় যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত হয়ে থাকে। যেকোনো পরিবারে পারিবারিক বাজেট তৈরি করতে হয় সেই পরিবারের আয়ের উৎসের উপর নির্ভর করে।
পারিবারিক বাজেট তৈরির প্রধান এবং মূল লক্ষ্য হচ্ছে যা আয় তার থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে কিছুটা অংশ সঞ্চয় করে রাখা। আপনি চাইলে পারিবারিক বাজেট প্রতি সপ্তাহের ভিত্তিতে, প্রতিমাসের ভিত্তিতে, প্রতি বছরের ভিত্তিতে করতে পারেন। তবে যেভাবেই করেন না কেন পারিবারিক বাজেটের লক্ষ্য হবে আয় এবং ব্যয়ের হিসাবের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা।
১) প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের তালিকা তৈরি করা
আপনি সাপ্তাহিকভাবে বা মাসিক ভাবে যেভাবেই পারিবারিক বাজেট তৈরি করার চেষ্টা করুন না কেন প্রথমত আপনাকে প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। প্রত্যেকটি পরিবারের সদস্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের তালিকা ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনার আয়ের উপর নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের তালিকা তৈরি করতে হবে যেন কোনভাবেই তা আপনার আয়ের চেয়ে বেশি না হয়। প্রথমদিকে বাধ্যতামূলক পণ্যগুলো সবার উপরে তালিকায় প্রকাশ করতে হবে এবং যে পণ্যগুলো ছাড়া আপনার চলবে সে পণ্যগুলো তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। মোটকথা প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ছাড়া এখানে কোন দ্রব্যমূল্যের স্থান হবে না।
২) দ্রব্যমূল্যের দাম আলাদা ভাবে তালিকা করা
সম্পূর্ণ মাস চলার জন্য আপনার কোন কোন প্রয়োজনে দ্রব্য প্রয়োজন হবে তা তালিকা করার পর দ্রব্যমূলের দাম আলাদাভাবে নির্ধারণ করুন। দ্রব্যমূল্যের দাম তালিকা করার পর আপনি বুঝতে পারবেন আপনার মাসিক ইনকামের ভিত্তিতে দ্রব্যমূলের দাম কত হচ্ছে এবং এখান থেকে কিছুটা কমানো বা বাড়ানো যেতে পারে কিনা। যদি আয়ের ভিত্তিতে দ্রব্যমূল্যের দাম বেশি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কিছুটা কমিয়ে আনুন এবং সেগুলো ছাড়াই চলার চেষ্টা করতে হবে।
আরো পড়ুন: কেন্দ্রীকরণ কি? কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ পার্থক্য
৩) সম্ভাব্য আয় নিশ্চিত করে রাখা
আপনি যে সময় বাজেট তৈরি করছেন সে সময় আপনার আয় কত তা সর্বপ্রথম নিশ্চিত হন। পারিবারিক বাজেট এমন হতে হবে যেন তা কোন ভাবেই পরিবারের আয়ের চেয়ে বেশি না হয় এবং যেন মাস শেষে ধার করে চলতে না হয়। এক্ষেত্রে যদি আপনি একেবারেই নিম্ন আয়ের হয়ে থাকেন তাহলে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করুন কিন্তু ধার করার চেষ্টা করবেন না। মনে রাখবেন সম্ভাব্য আয় নিশ্চিত করে বাজেট তৈরি করলেই আপনি ভাল ফলাফল পাবেন।
৪) আয় অনুযায়ী ব্যয়ের সমতা তৈরি করা
পারিবারিক বাজেটের মূল লক্ষ্যই হলো আয় অনুযায়ী ব্যয়ের সমতা তৈরি করা। অর্থাৎ কোনভাবেই যেন খরচ আয়ের চেয়ে বেশি না হয়। আয় অনুযায়ী ব্যয়ের সমতা তৈরি করলে তা একসময় পরিবারের আর্থিক স্থিতিশীলতার কারণ হয়ে দেখা দিবে।
৫) সঞ্চয়ের হিসাব তৈরি করা
পরিবার এখন সফলতায় চললেও ভবিষ্যতে যে পরিবার স্বচ্ছলতা চলতে পারবে এর নিশ্চয়তা কেউ প্রদান করতে পারে না। রোগ শোক থেকে শুরু করে পরিবারে বিভিন্ন ধরনের বিপর্যয় হতে পারে যেখানে বিপুল অংকের টাকা খরচ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই পারিবারিক বাজেট তৈরি করার সময় সঞ্চয়ের হিসাব আলাদাভাবে তৈরি করুন। আপনার যতটুকু সামর্থ্য আছে তার উপর ভিত্তি করে সঞ্চয়ের হিসাব গড়ে তুললে ভবিষ্যতে আকস্মিক ভাবে আসা বিপদ নিয়ে খুব বেশি চিন্তা ভাবনা করার প্রয়োজন হবে না। সুতরাং প্রত্যেক মাসে নির্দিষ্ট সঞ্চয়ের হিসাব তৈরি করে সেখানে সামর্থ্য অনুযায়ী কিছুটা টাকা সঞ্চয় করুন।
৬) পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট নির্ধারণ করা
পারিবারিক বাজেট তৈরি করার সময় খেয়াল রাখুন যেন পরিবারে হঠাৎ যদি কোন খাতে কিছুটা অর্থ বেশি ব্যয় হয় তাহলে যেন সঞ্চিত অর্থ থেকে তোলা না লাগে। অন্য কোন স্থান থেকে ওই বাজেট যেন পূরণ করে দেওয়া যেতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন। এতে করে পরিবারের প্রয়োজন যেমন মেটে ঠিক তেমনভাবে হঠাৎ আশা যে কোন বিপদ ও মোকাবেলা করা যায়।
আরো পড়ুন: ছাত্র জীবনে টাকা আয় করার উপায়
পারিবারিক বাজেটের নমুনা
বাজেট হলো একটি পরিকল্পনার সংখ্যাত্মক প্রকাশ। পরিবারের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য যখন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আয় ও ব্যয়ের একটি পূর্ব পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয় তখন তাকে পারিবারিক বাজেট বলা হয়। আরো সহজভাবে বলতে গেলে, পরিবারকে কেন্দ্র করে আয় ও ব্যয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কেও বাজেট বলা যেতে পারে। পরিবারকে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে রাখার জন্য পারিবারিক বাজেট গুরুত্বপূর্ণ।
যখন নির্দিষ্ট একটি বাজেটের মাধ্যমে পারিবারিক হিসাব-নিকাশ পরিচালনা করা হয় এবং নির্দিষ্ট আয়ের মধ্যেই সুন্দরভাবে জীবন ধারণ করা সম্ভব হয় তখন তা পরিবারের ভালো থাকার উৎসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সার্থক বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নির্ভর করে পারিবারিক আর্থ সামাজিক অবস্থার উপর। পরিবারের আর্থিক বাজেট তৈরীর সময় পরিবারের আয়, গঠন, আকৃতি, সকল সদস্যের রুচিবোধ, সামাজিকতার পরিচিতি ইত্যাদিসহ আরও অন্যান্য দিকগুলো বিবেচনায় রাখতে হয়।
বাজেট তৈরি সময় পরিবারের খরচের নমুনাগুলো আলাদা আলাদা ভাবে বন্টন করা যেতে পারে। যেমন: খাতে শতকরা ২২% থেকে ২৭%, বস্ত্রখাতে ৭% থেকে ১৩%, বাসস্থান খাতে ৩৫% থেকে ৪৫%, শিক্ষাখাতে ১৫% থেকে ২০%, এবং যানবাহন খাতে ১২% থেকে ১৮% এর উপর খরচ করা যাবে না। তবে আপনার পরিবারের আয়ের উপর ভিত্তি করে এই বন্টন হারকে কমাতে বা বাড়াতে পারেন।
আরো পড়ুন: মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করার উপায়
পারিবারিক বাজেটের সুবিধা কি কি

পারিবারিক বাজেট তৈরি করা একটা স্মার্ট আর্থিক সিদ্ধান্ত। এতে আপনার পরিবারের আর্থিক স্বাধীনতা এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা যায়। আসুন জেনে নিই পারিবারিক বাজেটের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা:
আর্থিক লক্ষ্য অর্জন
বাজেট তৈরি করে আপনি পরিষ্কারভাবে জানতে পারবেন আপনার আয় কত এবং কোন কোন খাতে কত খরচ হচ্ছে। এর ফলে আপনি নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য, যেমন বাড়ি কেনা, গাড়ি কেনা, বাচ্চাদের উচ্চশিক্ষা, অবসরের জন্য সঞ্চয় ইত্যাদি, সহজেই অর্জন করতে পারবেন।
অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো
বাজেট তৈরি করে আপনি দেখতে পাবেন কোন কোন খাতে অপ্রয়োজনীয় খরচ হচ্ছে। এসব খরচ কমানোর মাধ্যমে আপনি সঞ্চয় বাড়াতে পারবেন। এটাই পারিবারিক বাজেটের সবচেয়ে ভালো দিক।
আরো পড়ুন: মোবাইল ব্যাংকিং কি? মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা ও অসুবিধা
আর্থিক নিরাপত্তা
আকস্মিক কোনো খরচের জন্য আপনার কাছে যদি আলাদা করে টাকা জমিয়ে রাখা থাকে, তাহলে আপনাকে আর ঋণ নিতে হবে না। এটি আপনার পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা দিবে এবং আপনার পরিবারকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করবে।
আর্থিক স্বাধীনতা
বাজেট মেনে চললে আপনি আর্থিকভাবে স্বাধীন হয়ে উঠতে পারবেন। আপনাকে আর কারো উপর নির্ভর করতে হবে না। যখন আপনার পরিবারের সচ্ছলতা থাকবে এবং আপনি আর্থিকভাবে স্বাধীন থাকবেন তখন পরিবারের ঝামেলা এবং অশান্তি এমনিতেই কমে আসবে।
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আর্থিক শিক্ষা
বাজেট তৈরির সময় পরিবারের সব সদস্যদের সাথে আলোচনা করা উচিত। এতে পরিবারের সবাই আর্থিক বিষয়ে সচেতন হবে এবং ভবিষ্যতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
আরো পড়ুন:
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার
- কম খরচে ইউরোপের কোন দেশে যাওয়া যায়
- ড্রপশিপিং কি? ড্রপশিপিং ব্যবসা থেকে আয় করে কিভাবে
পারিবারিক বাজেট সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নউত্তর
বাজেটের তিন প্রকার কি কি?
বাজেটের তিনটি প্রকার হলো অপারেটিং বা বর্তমান বাজেট, মূলধন বা বিনিয়োগ বাজেট এবং নগদ বা নগদ প্রবাহ বাজেট।
পারিবারিক বাজেট তৈরির উদ্দেশ্য কি?
পারিবারিক বাজেট তৈরির উদ্দেশ্য হলো পারিবারিক খরচ কমানো, ভবিষ্যতের জন্য কিছু সঞ্চয় করা, সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করা, পারিবারিক আয় বৃদ্ধি করা।
বাজেটের প্রয়োজনীয়তা কি?
পারিবারিক বাজেটের প্রয়োজনীয়তা গুলো তুলে ধরা হলো:
বাজেট পরিবারের আয় ও ব্যয় সম্বন্ধে ধারণা দেয়, পরিবারের অপচয় রোধ করে স্বচ্ছলতা আনয়নে সাহায্য করে, ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ের ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করে, গুরুত্বপূর্ণ চাহিদাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পূরণ করে, বাজেট পরিবারের সদস্যদের মিতব্যয়ী হতে সাহায্য করে, বাজেট করে অর্থ ব্যয় করলে সময় ও শক্তির সাশ্রয় হয়।
পারিবারিক বাজেট সম্পর্কে আমাদের মতামত
বর্তমান এই প্রতিযোগিতামূলক দুনিয়ায় পরিবারকে টিকিয়ে রাখার জন্য পারিবারিক বাজেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের আর্টিকেলে আমরা পারিবারিক বাজেট নিয়ে খুঁটিনাটি আলোচনা করেছি। যারা পারিবারিক বাজেট তৈরি করতে যাচ্ছিলেন কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে করতে পারছিলাম না তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটি গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে আশা করছি। আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ে দেখার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন তথ্যবহুল এবং জানা অজানা নানা তথ্য জানার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।