তথ্য প্রযুক্তি কি? তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় ICT। শিক্ষাক্ষেত্র থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, ব্যবসা, কৃষি, যোগাযোগ ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার আছে। বর্তমান আধুনিক যুগে তথ্য প্রযুক্তি ছাড়া একটি দিনও কল্পনা করা যায় না। 

তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লবের কারণে বর্তমানে মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক সহজ হয়েছে। আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার সম্পর্কে। আপনি যদি তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ে ফেলুন।

Table of Contents

তথ্য প্রযুক্তি কি

তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে জানার পূর্বে আমাদের জানা প্রয়োজন তথ্য প্রযুক্তি মূলত কি?  আমরা অনেকেই তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে সঠিকভাবে জানি না। এক কথায় যদি তথ্য প্রযুক্তির সংজ্ঞা বলা হয় তাহলে বলা যায় – তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এমন এক প্রযুক্তি যেখানে তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বিতরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। 

তথ্যপ্রযুক্তির উদ্দেশ্য হলো দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যোগাযোগকে সহজ করে তোলা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে ইংরেজিতে ICT ( Information and Communication Technology)  বলা হয়।  

আরো পড়ুন: ব্যবস্থাপনা কাকে বলে? ব্যবস্থাপনা কত প্রকার ও কি কি

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ ব্যবহার 

বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তিগত দুনিয়ায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার আমরা সব ক্ষেত্রে দেখতে পাই। শিক্ষাক্ষেত্র ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্র থেকে শুরু করে জীবনে প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা তথ্য প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। নিচে আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত দিলাম:

১. শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার

শিক্ষা ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে শিক্ষাক্ষেত্র অনেক বেশি উন্নত হয়েছে। বিশেষ করে, পুরো বিশ্বে আমরা করোনা মহামারির সময় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষা ক্ষেত্রে দেখতে পেয়েছি। যা শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বেশি উপকারী ছিল।  শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি যেভাবে ব্যবহার করা হয় সেগুলো হলো:

  • অনলাইন ক্লাস: তথ্য প্রযুক্তির কারণে এখন আর ক্লাসে বসে ক্লাস করার প্রয়োজন পড়ে না। বিশেষ কোনো কারণে ক্লাসে উপস্থিত না হতে পারলে অনলাইনের মাধ্যমেই পুরো ক্লাস টি করা যায়। প্রকৃতিক বিভিন্ন বিপর্যয়ের সময় অনলাইন ক্লাস অনেক বেশি উপকারী।
  • ই-বুক: শিক্ষার্থীরা চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে ই-বুক ডাউনলোড করে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে বইয়ের হার্ডকপি এর কোন প্রয়োজন পড়ে না। ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার, ল্যাপটপ অথবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এসব বই পড়া যায়।
  • ভিডিও টিউটোরিয়াল: শিক্ষার্থীরা বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের স্কিল ডেভেলপ করতে পারে ভিডিও টিউটোরিয়াল এর মাধ্যমে। এক্ষেত্রে হাতে-কলমে সহজেই শিখতে পারে।
  • প্রজেক্টর এর মাধ্যমে পাঠদান: বর্তমানে স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে প্রজেক্টর এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। এক্ষেত্রে যেকোনো কঠিন পড়া সহজেই শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে।
  • ই লার্নিং প্লাটফর্ম: অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যে কোন স্কিল সহজ ভাবে শেখার জন্য ই লার্নিং  প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হতে পারে।
  • লার্নিং অ্যাপ: শিক্ষার্থীদের জন্য মোবাইলে ব্যবহার করা যায় এমন হাজার হাজার অ্যাপস  রয়েছে। যেগুলো দিয়ে প্রোগ্রামিং, ভাষা, ম্যাথ ইত্যাদি কঠিন কঠিন বিষয় গুলো সহজেই শিখতে পারে।

এগুলো ছাড়াও শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক ধরনের ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়। শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে এ ধরনের প্রযুক্তি গুলো বেশ ভালোভাবে কাজ করছে।

আরো পড়ুন: ছাত্র জীবনে টাকা আয় করার উপায়

২. স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার 

আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সেক্টর হল স্বাস্থ্য ক্ষেত্র। স্বাস্থ্য ক্ষেত্র কে উন্নত করার জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবাকে আরো উন্নত করা হয়েছে। সাধারণত যেসব ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় সেগুলো হলো:

  • টেলিমেডিসিন: টেলিমেডিসিন এর মাধ্যমে  তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে দূর দূরান্ত থেকে সহজেই চিকিৎসা প্রদান করা যায়। বিশেষ করে এগুলো প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। অথবা জরুরি অবস্থায় সেবা প্রদান করার জন্য টেলিমেডিসিন সেবা ব্যবহার  করা হয়। টেলিমেডিসিন সেবা রোগী ও ডাক্তারের মধ্যে ভিডিও কলের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়।
  • রোগির তথ্য সংরক্ষণ: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির EMR / EHR ব্যবহার করে রোগীর রোগের তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া থাকে। যা এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ট্রান্সফার করা যায়।
  • অনলাইনে ডাক্তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনের মাধ্যমে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট  নেয়া যায়।
  • আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স: বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করা হয় স্বাস্থ্য সেবাতে। বিভিন্ন ধরনের কঠিন রোগ নির্ণয় করতে সঠিকভাবে কাজ করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
  • মেডিকেল ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ: মেডিকেলে ব্যবহৃত সমস্ত ডিভাইস গুলোকে কম্পিউটার এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  • রোগীদের জন্য অ্যাপ: রোগীরা চাইলে অ্যাপের মাধ্যমে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অ্যাপের মাধ্যমে জানতে পারে। 

এছাড়াও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে হাজার হাজার উপায়ে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।

আরো পড়ুন: অনলাইন ব্যাংকিং কাকে বলে? সুবিধা, অসুবিধা ও গুরুত্ব

৩. ব্যবসা ক্ষেত্রে  তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার

ব্যবসায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে সব ধরনের ব্যবসায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। গুরুত্বপূর্ণ যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় সেগুলো হলো:

  • ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম: অনলাইনে ব্যবসা করার অন্যতম একটি পদ্ধতি হলো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। যেখানে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রয় করা হয়। এ ক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ সম্পন্ন করা হয়। ক্রেতা তার ইচ্ছামত অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য নির্বাচন করে ক্রয় করতে পারে। ই-কমার্স এর মাধ্যমে ব্যবসা ক্ষেত্রে বিপুল পরিবর্তন এসেছে।
  • ডিজিটাল মার্কেটিং: ব্যবসার মূল একটি বিষয় হলো মার্কেটিং। মার্কেটিং কে আরো সহজ করার জন্য তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার দেখা যায়। অনলাইনের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের পণ্য নির্দিষ্ট কাস্টমারকে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেখানো সম্ভব। এক্ষেত্রে গুগল এডস ও ফেসবুক বুস্টিং বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ইমেইল মার্কেটিং,  এসএমএস মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ইত্যাদি ব্যবসা করতে সাহায্য করে। 
  • অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম: ক্রেতা বা বিক্রেতা উভয়ে অনলাইনের মাধ্যমে পেমেন্ট দিতে ও গ্রহণ করতে পারে। এর ফলে লেনদেন অনেক বেশি নিরাপদ ও সহজতর হয়েছে। আমাদের দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম বিকাশ ও নগদ অনলাইন পেমেন্ট দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
  • ব্যবসায়িক সফটওয়্যার: ব্যবসা ম্যানেজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার পাওয়া যায়। যেগুলোর মাধ্যমে ব্যবসার সকল হিসেব নিকাশ ডিজিটাল ভাবে সংরক্ষণ করা যায়। যার ফলে ব্যবসায়িক যেকোনো ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন: বিকেন্দ্রীকরণ কি‌? বিকেন্দ্রীকরণ এর সুবিধা অসুবিধা

৪. যোগাযোগের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আমাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেক বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। কল্পনা করুন, এক সময় মানুষ আগুনের মাধ্যমে যোগাযোগ করত। সময়ের পরিক্রমায় টেলিফোন, মোবাইল ফোন, স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করে যোগাযোগ করতে সক্ষম হচ্ছে। সাধারণত যেসব ক্ষেত্রে যোগাযোগের আমূল পরিবর্তন এসেছে সেগুলো হলো –

  • ইমেইল: বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে যোগাযোগের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হল ইমেইল সেবা। ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও বিভিন্ন ধরনের দাপ্তরিক ক্ষেত্রে ইমেইল আদান প্রদান করা হয়। 
  • ভিডিও কল: ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করে বিশ্বের যে কোন প্রান্তে সরাসরি ভিডিও কলে যোগাযোগ করা যায়। 
  • সোশ্যাল মিডিয়া: বর্তমানে বিভিন্ন দেশে সোশ্যাল মিডিয়াকে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে facebook, twitter, টেলিগ্রাম, whatsapp, instagram ইত্যাদি অ্যাপ গুলো ব্যবহার করা হয়।
  • ভয়েস কল: মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ভয়েস কলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা ছাড়াই, বিশ্বের যে কোন প্রান্তে যোগাযোগ করা যায়।

আরো পড়ুন: কেন্দ্রীকরণ কি? কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ পার্থক্য

৫. কৃষি ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি ক্ষেত্রে অনেক বেশি উন্নয়ন লক্ষ করা যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি ক্ষেত্রে আগের তুলনায় অনেক বেশি ফলন নিশ্চিত করা সম্ভব। এতে কৃষক ও দেশের অনেক বেশি লাভ হচ্ছে। কৃষি ক্ষেত্রে যেসব তথ্য প্রযুক্তির উপকরণ ব্যবহার করা হয় সেগুলো হলো:

  • আবহাওয়ার পূর্বাভাস: পূর্বে আবহাওয়ার পূর্বাভাস সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা যেত না। এ কারণে ঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কৃষি ক্ষেত্রে ফসল নষ্ট হওয়ার ঝুকি বেড়ে যেত। তবে বর্তমানে তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সঠিকভাবে আবহাওয়ার পুর্বাভাস দেয়ার কারণে কৃষি ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ কমেছে।
  • মাটির গুনাগুন পরীক্ষা: একেক ধরনের মাটিতে একেকরকম ফসল ভালো হয়। মাটির গুনাগুন সঠিকভাবে পরীক্ষা করার জন্য অনেক ধরনের স্মার্ট ডিভাইস রয়েছে। যার মাধ্যমে মাটি অনুযায়ী সঠিকভাবে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।
  • আধুনিক সেচ ব্যবস্থা: আধুনিক সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে অল্প খরচে জমিতে সেচ প্রদান করা যায়। বিশেষ করে সোলার শক্তি ব্যবহার করে জমিতে কোন প্রকার খরচ ছাড়াই সেচ দেয়া যায়।
  • অনলাইন কৃষি পরামর্শ: অনলাইনের মাধ্যমে কৃষকরা ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারে। এর ফলে ফসলের উৎপাদন অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। 
  • ফসলের রোগ সনাক্তকরণ: ফসলের নানান ধরনের রোগ ফসল নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। তথ্য প্রযুক্তির বিভিন্ন ডিভাইসের মাধ্যমে ফসলের যেকোনো ধরনের রোগ সনাক্ত করা যায়। রোগ সনাক্তের পাশাপাশি রোগ অনুযায়ী ঔষধের পরামর্শ গ্রহণ করা যায়।
  • ফসল বিক্রির প্ল্যাটফর্ম: কৃষকদের ন্যায্য মূল্য ফসল বিক্রয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের অনলাইন প্লাটফর্ম যুক্ত করা হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশে এখনো এমন ধরনের কোন প্ল্যাটফর্ম লক্ষ্য করা যায়নি তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কৃষকরা অনলাইনের মাধ্যমে ন্যায্য মূল্য ফসল বিক্রি করতে পারে।

আরো পড়ুন: পারিবারিক বাজেট কাকে বলে? পারিবারিক বাজেট তৈরির নিয়ম

৬. বিনোদন ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার

বর্তমানে আমরা অনলাইনের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে বিনোদন নিতে পারি। শুধুমাত্র একটি স্মার্টফোনের মাধ্যমে ঘরে বসেই বিনোদন নেওয়া যায়। বিনোদনের ক্ষেত্রে মুভি থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং সবকিছুই সম্ভব। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ঘরে বসেই বন্ধুদের সাথে আড্ডা, একসাথে সিনেমা দেখা, সবকিছুই সম্ভব তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে। বিনোদনের যেসব ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি পরিবর্তন এনে দিয়েছে সেগুলো হলো –

  • ভিডিও স্ট্রিমিং: ঘরে বসে যে কোন ধরনের ভিডিও স্ট্রিমিং করা যায়। মনে করুন, আপনি ইনফো গ্রাফিক ভিডিও কনটেন্ট দেখবেন। youtube এর মাধ্যমে সহজেই আপনি এ ধরনের ভিডিও কনটেন্ট দেখতে পারবেন। এছাড়াও নেটফিলিক্স এর মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও লেটেস্ট মুভি গুলো স্টিম করতে পারবেন। 
  • অনলাইন গেমিং: অনলাইন বিনোদনের ক্ষেত্রে গেমিং বিশেষভাবে কাজ করে। আমরা অনেকেই গেম খেলতে পছন্দ করি। অনলাইনের মাধ্যমে কম্পিউটার অথবা মোবাইল দিয়ে যেকোনো ধরনের গেম উপভোগ করা যায়। 
  • ডিজিটাল টিভি: বর্তমানে ইন্টারনেট সেবার মাধ্যমে টিভি চ্যানেল দেখা সম্ভব। এজন্য আপনাকে টাকা খরচ করে ডিটিএইচ ক্রয়ের প্রয়োজন পড়বে না। অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ওটিটি প্লাটফর্মে টিভি চ্যানেল গুলো বিনামূল্যে দেখা যায়। 
  • সোশ্যাল মিডিয়া লাইভ:  বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়াতে ভিডিও স্ট্রিমিং সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে যে কোন স্থান থেকে প্রযুক্তি ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়া লাইভ ব্যবহার করা যায়। যার মাধ্যমে অনলাইনে অনেক ইনফ্লুয়েন্সার তৈরি হয়েছে। 

আরো পড়ুন: পারিবারিক আয় ও ব্যয় কাকে বলে

৭. সরকারি ও প্রশাসনিক কাজে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার

সরকারি ও প্রশাসনিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়। অনলাইনে ট্যাক্স প্রদান থেকে শুরু করে পাসপোর্ট আবেদন, অনলাইন লাইসেন্স, জমির খাজনা প্রদান ছাড়াও নাগরিক সকল সেবা অনলাইনের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। প্রধান কয়েকটি সরকারি তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হলো –

  • নাগরিক সেবা পোর্টাল: নাগরিক সেবা পোর্টাল হলো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নাগরিকদের সেবা প্রদান করা।  যেখানে ট্যাক্স প্রদান, আইডি কার্ড আবেদন, নাগরিক তথ্য হালনাগাদ করা ইত্যাদি সকল সেবা সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
  • ই-পাসপোর্ট আবেদন: অনলাইনের মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুব সহজেই ই পাসপোর্ট আবেদন করা যায়।
  • সরকারি অ্যাপ: সরকারি বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদানকারী অ্যাপ রয়েছে। যেগুলোর মাধ্যমে দেশের জনগণ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
  • সরকারি তথ্য প্রচার: ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারি সকল তথ্য প্রচার করা হয়। যা নাগরিকদের সেবাদানে অনেক বেশি সফল।

আরো পড়ুন: মোবাইল ব্যাংকিং কি? মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা ও অসুবিধা

৮. যাতায়াত ও পরিবহন ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার

বর্তমানে যাতায়াত খাতে তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। যে কোন অপরিচিত স্থানে যাওয়ার জন্য আমরা জিপিএস ব্যবহার করি যা তথ্যপ্রযুক্তির অংশ। এরকম প্রধান কয়েকটি প্রযুক্তি বিভিন্ন স্থানে ব্যবহার করা হয় যেগুলো হলো:

  • জিপিএস: জিপিএস এর মাধ্যমে যে কোন অপরিচিত স্থান থেকে নিজের লোকেশন যাচাই করা যায়। এছাড়াও অন্য যে কোন স্থানে যেতে জিপিএস ও গুগল  ম্যাপ ব্যবহার করা হয়।
  • অনলাইন টিকিট বুকিং: অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই রেল, ট্রেন, বাস, লঞ্চ ইত্যাদি টিকেট বুকিং করা যায়।
  • ট্রাফিক আপডেট: কোন রাস্তায় কি পরিমান ট্রাফিক রয়েছে তা অ্যাপের মাধ্যমে আপডেট পাওয়া যায়। 
  • ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ: রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। 
  • রাইড শেয়ারিং অ্যাপ: রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে যে কোন স্থানে যাওয়ার জন্য রাইড নেওয়া যায়।

আরো পড়ুন: সরকারি ভাবে ইউরোপ যাওয়ার উপায়

৯. গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার 

গবেষণার মাধ্যমে দিন দিন আমরা প্রযুক্তি কে আরো বেশি আপডেট করতে পারছি। নতুন কিছু আবিষ্কারের জন্য গবেষণার কোন বিকল্প নেই। গবেষণা কে আরো সহজ করে তুলেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। যার মধ্যে কয়েকটি প্রধান দিক হলো:

  • অনলাইন জার্নাল: অনলাইন জার্নালের মাধ্যমে যে কেউ যেকোনো বিষয়ে রিসার্চ করতে পারে। যেখানে প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত  বর্ণনা পাওয়া যায়।
  • ডিজিটাল ল্যাব: ডিজিটাল ল্যাবে বিভিন্ন ধরনের রিসার্চ আর্টিকেল পাওয়া যায় যেখান থেকে সহজেই গবেষণা করা যায়। 
  • গবেষণা ফোরাম: অনলাইনে অনেক গবেষণা ফোরাম রয়েছে। যেখানে অনেক গবেষকরা তাদের অপনিয়ন শেয়ার করে।

আরো পড়ুন: মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করার উপায়

১০: দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে স্মার্ট টিভি আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গি। স্মার্ট হোম ডিভাইস গুলো বর্তমানে বড় মাইলফলক অর্জন করেছে। যেগুলো হলো:

  • গুগল হোম: বাসা বাড়িতে এই প্রযুক্তি সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। অফিসে বসেও বাসার সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  • সিসিটিভি ক্যামেরা: ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অথবা বাসা বাড়ি। সিকিউরিটি বাড়াতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহুত হয় সিসি ক্যামেরা ডিভাইস।

আরো পড়ুন: 

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে আমাদের মতামত

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি ব্যবহার  সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। আধুনিক এই বিশ্বে এখন প্রযুক্তি আমাদের সাথি। প্রযুক্তির উন্নয়ন এর ফলে মানুষের জীবন যাত্রার মান অনেক বেশি পরিবর্তন হয়েছে। ভবিষ্যতে হয় AI আমাদের জীবন কে আরো বেশি সহজ করে দিবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির নিয় আপনার ভবিষ্যত ধারণা আমাদের জানাতে পারেন কমেন্টে।

Leave a Comment